যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেনের চেয়ে ভারতের নারী পাইলটরা এগিয়ে
ভারতীয় নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। পুরুষের সাথে সমান প্রতিযোগিতা করে কর্মক্ষেত্রের সব স্তরেই এগিয়ে গেছেন নারীরা। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-শিক্ষকদের মতো প্রচলিত পেশার পাশাপাশি নারীরা এখন বিমানও চালাচ্ছেন। অবাক করা তথ্য হচ্ছে বিশ্বে বিমানচালকের সংখ্যায় আমেরিকা-ব্রিটেনের থেকেও এগিয়ে আছেন ভারতীয় নারীরা।
পিতৃতান্ত্রিক সমাজে লিঙ্গবৈষম্যের দিক দিয়ে বিচার করলে বিশ্বের ১৪৬টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৩৫। কিন্তু সেই ভারতে বিমানচালনায় কিভাবে এগিয়ে গেলেন নারীরা?
পথটা মোটেও মসৃণ ছিল না। শুরুর দিককার তীক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে ভারতের কনিষ্ঠতম নারী পাইলট নিবেদিতা ভাসিন বলেন, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল নারীরা বিমান চালাবে এটা সুদূর কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
• আরও পড়ুন : সরকারি চাকরি না করে এমি এখন কারখানার মালিক
নিবেদিতা ভাসিন যখন বিমান চালানো শুরু করলেন সেই সময়ের একটি ঘটনার চিত্র উঠে এসেছে আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে- সময়টা ১৯৮৯ সাল। ককপিটে ওঠার সময় হয়ে এসেছে। ক্রুরা সকলেই নিজেদের কাজে ব্যস্ত। এই ব্যস্ততার মাঝেও কানে এল, কেউ দেখে ফেলার আগে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ুন। তাকে বিমান চালাতে দেখলে যাত্রীরা ভয় পেয়ে বিমান থেকে নেমে পড়বেন!
বিশ্বের বৃহত্তম বিমান পরিবহনের বাজার যুক্তরাষ্ট্রে। তবে সেখানেও নারী পাইলট ৫.৫ শতাংশ, ব্রিটেনেও ৪.৭ শতাংশ। সেখানে ভারতে নারী পাইলটের হার ১২.৪ শতাংশ।
সেই ১৯৮৯ সালের ঘটনার তিন দশক পর ভারতীয় বিমানের চিত্র বদলে যায়। ‘এয়ার ইন্ডিয়া’ সংস্থার বিমানচালক জোয়া আগারওয়াল সান ফ্রানসিস্কো থেকে যাত্রা শুরু করে টানা পাঁচ দিন বিমান চালিয়ে বেঙ্গালুরুতে পৌঁছান। পাইলটসহ সেই বিমানের সকল ক্রুই ছিলেন নারী। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেরও নজর কেড়েছিলেন জোয়া।
• আরও পড়ুন : বিয়ের আসরে কনের পা ছুঁয়ে বরের প্রণাম, চটলেন পুরোহিত
এক সাক্ষাৎকারে জোয়া বলেছিলেন, আমার মতো নারীরা টানা পাঁচ দিন ধরে সান ফ্রানসিস্কো থেকে বিমান চালিয়ে এসেছে, এর পেছনে মূল কারণ পরিবার। পরিবারের সবাই পাশে ছিল বলেই এটা পেরেছি। শুধু তিনি একাই নন, নারী পাইলটদের অনেকেই স্বীকার করেন যে তাদের সফলতার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ তাদের পরিবার।
নারীরা ইঞ্জিনিয়ার-শিক্ষিকা পেশা ছাড়াও যে বিমানচালকের পেশায় এসেও টাকা উপার্জন করতে পারেন, সেই বিষয়ে ভারতীয়দের ধারণা কম বলে দাবি করেছেন অ্যালায়েন্স এয়ার বিমানসংস্থার সিইও হরপ্রীত এ দে সিং। কোনো বিমানসংস্থা পরিচালনার দায়িত্বে থাকছেন এক নারী! হরপ্রীত এই গুরুভার নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছিলেন।
• আরও পড়ুন : তানিয়ার প্রতি মাসে আয় ৭০ হাজার টাকা
ছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। তাই তিনি বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে তথ্য দিতেন। পাইলট থেকে শুরু করে ট্রাফিক কন্ট্রোলার পর্যন্ত কোন কোন পদে নারীরা আবেদন করতে পারেন সেই বিষয়ে জানাতেন হরপ্রীত। তিনি জানিয়েছেন, তার এই দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টার পর বিমানসংস্থার বিভিন্ন পদে নারীদের চাকরি করতে দেখা গেছে। তার আগে এই প্রসঙ্গে কিছুই জানতেন না নারীরা।
এছাড়া নারীরা যেন আরও বেশি করে এই চাকরির জন্য আবেদন করে সে দিকে লক্ষ্য রেখে নারী কর্মীদের জন্য নানা রকম অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করে ভারত। ১৯৪৮ সাল থেকেই বহু ভারতীয় নারী ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মাইক্রোফ্লাইট এয়ারক্রাফ্ট পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণও দেওয়া হতো তাদের। তবে, এর খরচ বেশি হওয়ায় রাজ্য সরকার বিশেষ ভর্তুকি চালু করেন।
কিছু বিমানসংস্থা নারী কর্মীদের নিরাপত্তার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। যাতায়াতের সময় যেন কোনো অসুবিধার সম্মুখীন না হতে হয়, তাই তাদের জন্য আলাদা গাড়ির ব্যবস্থা করা থাকে। শুধু তা-ই নয়, অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য অনেক প্রতিষ্ঠানে বিশেষ সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়। ভারতের সবচেয়ে বড় যাত্রিবাহী বিমানসংস্থা ইন্ডিগো অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় ২৬ মাসের সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি দেয়। সন্তানের বয়স পাঁচ বছর হওয়া পর্যন্ত নারী পাইলটরা এক মাসে দু’সপ্তাহের জন্য ছুটির আবেদন করতে পারেন। এছাড়া অন্যান্য আরও কিছু সুবিধাও দেওয়া হয়।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। এ ছাড়া ব্রিটেনও ভারতের চেয়ে ১৫ গুণ বেশি বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বিমান পরিবহনের বাজার বড় হওয়ায় দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেশি বলে ধরে নেওয়া যায়। তবে, ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত বিমান দুর্ঘটনাগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে এই পরিমাণ ১০ শতাংশ হলে এর মধ্যে তিন শতাংশ দুর্ঘটনায় সেই বিমানের পাইলট ছিলেন নারী।
এনএফ