সাজিদের পাইলট হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করছে ইউএস-বাংলা
রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন সাজিদ শাহাদত। ছোট থেকেই আকাশে ওড়ার স্বপ্ন ছিল তার। পাইলট হওয়ার স্বপ্ন এত দিন লালন করে আসছিলেন, আজ সেই স্বপ্ন সত্যি হতে যাচ্ছে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের হাত ধরে সাজিদের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। খুব শিগগিরই ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের খরচে পাইলট হয়ে দেশে ফিরবেন।
সাজিদ জানিয়েছেন, তার স্বপ্ন আজ পূরণ হতে যাচ্ছে ইউএস-বাংলার কল্যাণে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের খরচে সাজিদের মতো আরও ২০ জন দক্ষ পাইলট হয়ে দেশে ফিরে আসবেন। তাদের প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হচ্ছে।
রোববার (২৮ মে) রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ইউএস-বাংলার দ্বিতীয় ধাপে ১১ শিক্ষার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো বিষয়ক পরিচিতি অনুষ্ঠান শেষে সাজিদ নিজের স্বপ্ন পূরণের কথা ঢাকা পোস্টকে জানান।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট অপারেশনস বিভাগের শিক্ষানবিশ পাইলট সাজিদ শাহাদত বলেন, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের শিক্ষানবিশ পাইলট প্রোগ্রাম আমাদের জন্য বড় একটি সুযোগের জানালা খুলে দিয়েছে। কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই এই প্রোগ্রাম গ্রহণ করতে পেরেছি। এই প্রোগ্রাম দেশীয় এভিয়েশন সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই প্রোগ্রাম ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগাবে এই সেক্টরে আসার জন্য।
তিনি বলেন, পাইলট হওয়ার বিষয়টি অনেক ব্যয়বহুল একটি বিষয়। তাই অনেকে ইচ্ছা থাকার পরও এ সেক্টরে আসতে পারে না। ইউএস-বাংলার এই প্রোগ্রামের কারণে এখন অনেকেই পাইলট হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। এজন্য ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সকে অবশ্যই অনেক ধন্যবাদ আমাদের এত বড় সুযোগ দেওয়ার ও বিনিয়োগ করার জন্য। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স শুধু নিজেদের কথা চিন্তা করছে তা না, তারা সমগ্র ইন্ডাস্ট্রি ও এভিয়েশন সেক্টরের নিরাপত্তার বিষয়ে খেয়াল রাখছে।
প্রশিক্ষণ শেষ করে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে যোগদান করে ফ্লাই করার স্বপ্নের কথা জানিয়ে সাজিদ বলেন, এর আগে আমাদের মধ্যে ১০ জন আমেরিকার ফ্লোরিডায় প্রশিক্ষণ নিতে গেছে। আর বাকি ১১ জন আমরা যারা আছি, তারা এই মাসের ৩০ তারিখে আমেরিকার উদ্দেশ্যে রওনা হব। ফ্লোরিডায় আমাদের এক বছরের প্রশিক্ষণ হবে। সেখানে এক বছরে আমরা প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স ও কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স নিয়ে আসব। দেশে এসে এয়ারলাইন্স ট্রান্সপোর্ট পাইলট লাইসেন্স সম্পূর্ণ করে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে জয়েন করে ফ্লাই করব।
উল্লেখ্য, ২১ শিক্ষার্থীকে পাইলট বানাতে তাদের সব ধরনের খরচ বহন করে প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। সেই ধারাবাহিকতায় ৩০ মে দ্বিতীয় ধাপে ১১ জন শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন।
এর আগে গত ২ মে প্রথম ধাপে ১০ জন শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। ফ্লাইট ট্রেনিং কোর্স শেষ করার পর ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স (এফএএসিপিএল) প্রাপ্ত হবেন তারা।
দীর্ঘ এক বছরের নির্বাচনী প্রক্রিয়া শেষ করে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ফ্লাইং একাডেমিতে পাঠানো হচ্ছে। দেশে ফিরে তারা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে যোগদান করবেন।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স জানায়, ২০২২ সালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স নিজ খরচে পাইলট বানানোর উদ্যোগ নেয়। এরপর নানা প্রক্রিয়ায় ৬ হাজার ৫০০ জনের মধ্যে ২১ জনকে নির্বাচন করে তাদের ‘ফ্লাইং একাডেমিতে পাঠানোর যোগ্য’ বলে উল্লেখ করা হয়। বাছাই করা ২১ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০ জন তরুণ এবং একজন তরুণী।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জিএম-জনসংযোগ মো. কামরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০২২ সালের এপ্রিলে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সহযোগিতায় ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রার্থী নির্বাচনের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ২১ জনকে বাছাই করা হয়। তারা ফ্লোরিডায় কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স ট্রেনিং শেষ করে দেশে ফিরবেন এবং ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে পাইলট হিসেবে যোগদান করবেন।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স জানায়, শিক্ষার্থীদের পাইলট হওয়ার পূর্বশর্ত ছিল বিজ্ঞান বিভাগে গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানসহ এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ অথবা এ লেভেলে ন্যূনতম দুই বিষয়ে (গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞান) গ্রেড-বি পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়া। এছাড়াও স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানের স্নাতকরাও আবেদন করেছেন। আবেদনকারীদের সর্বোচ্চ বয়স ২৫ বছর ও উচ্চতা ন্যূনতম ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি নির্ধারণ করা হয়েছিল। আবেদন করা শিক্ষার্থীদের আইকিউ টেস্ট, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা এবং সংশ্লিষ্ট কয়েকটি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়।
এমএসি/এমএইচএন/এসএসএইচ/