উত্তরায় বিধ্বস্ত হওয়া এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমানের বিস্তারিত

উত্তরায় দুপুর একটার পর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হয়েছে। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর মাইলস্টোন স্কুলের ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। ভবনটির নাম হায়দার হল বলে জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় অন্তত ১৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় ১৬৪ জন আহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
ঢাকা মেডিকেলের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে তথ্য মতে, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত দগ্ধ হওয়া নারী ও শিশুসহ অন্তত ৫০ জনকে আনা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই শিক্ষার্থী।
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরায় বিধ্বস্ত হয়। উত্তরায় প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তে ঘটনায় উদ্ধার তৎপরতা ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এবং উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র্যাবের মোতায়েন করা হয়েছে।
এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমানের প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য-
ইঞ্জিন : এই বিমানে একটি ডব্লিউপি-১৩এফ (WP-13F) আফটারবার্নিং টার্বোজেট ইঞ্জিন রয়েছে।
সর্বোচ্চ গতি : এটি প্রায় ২,৪৭০ কিমি/ঘণ্টা বা ২.২ ম্যাক (Mach 2.2) গতিতে উড়তে সক্ষম।
রেঞ্জ: এর ফেরি রেঞ্জ (ফেরত যাওয়ার ক্ষমতাসহ) প্রায় ২,০০০ কি.মি.।
আরও পড়ুন
অস্ত্র: এফ-৭ বিজিআই বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র বহন করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে; পিএল-৫ (PL-5) / পিএল-৯ (PL-9) ইনফ্রারেড গাইডেড মিসাইল। ৩০ মিমি কামান। ফ্রি-ফল বোমা। রকেট পড। এটি লেজার গাইডেড বোমা (যেমন: Mk 81, Mk 82-এর জন্য TEBER গাইডেন্স কিট), জিপিএস গাইডেড বোমা এবং ৩০০০০ পাউন্ড পর্যন্ত সাসপেন্ডেড আরমামেন্ট বহন করতে পারে।
রাডার: এতে কেএলজে-৬এফ (KLJ-6F) পালস ডপলার রাডার ব্যবহার করা হয়, যা ৮০ কিমি+ রেঞ্জ কাভার করে এবং ট্র্যাক হোয়াইল স্ক্যান (TWS) ও বিয়ন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ (BVR) মোড রয়েছে বলে কিছু অনানুষ্ঠানিক সূত্রে দাবি করা হয়। এটি ইনফ্রারেড মিসাইলকে স্লেভ করতে পারে।
ককপিট: এফ-৭ বিজিআই-এর ককপিট আধুনিক ‘গ্লাস ককপিট’, যেখানে মাল্টিফাংশন ডিসপ্লে (MFD) এবং হ্যান্ডস অন থ্রটল অ্যান্ড স্টিক (HOTAS) সিস্টেম রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর গুরুত্ব: এফ-৭ বিজিআই বিমান বাংলাদেশের আকাশসীমা রক্ষা, সীমান্ত টহল এবং প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর হাতে প্রায় ৩৬টি এফ-৭ সিরিজের বিমান রয়েছে, যার একটি বড় অংশই বিজিআই মডেলের। বাংলাদেশ নিজস্বভাবে এই বিমানগুলোর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে, যা এর অপারেশনাল খরচ কমাতে এবং নির্ভরযোগ্যতা বাড়াতে সাহায্য করেছে।
সীমাবদ্ধতা: যদিও এফ-৭ বিজিআই একটি মধ্যম মানের যুদ্ধবিমান এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য কার্যকর, তবে আধুনিক যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
সীমিত বিয়ন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ (BVR) যুদ্ধক্ষমতা : আধুনিক যুদ্ধবিমানগুলোর তুলনায় এর বিয়ন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ (BVR) যুদ্ধক্ষমতা সীমিত, যা দীর্ঘ পরিসরে শত্রুর মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে একটি দুর্বলতা।
এক ইঞ্জিন: এটি একটি মাত্র ইঞ্জিন দ্বারা চালিত, যা দীর্ঘ অপারেশনের ক্ষেত্রে কিছু ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
স্টেলথ প্রযুক্তির অভাব: এতে স্টেলথ প্রযুক্তির অভাব রয়েছে, ফলে এটি আধুনিক ৪.৫ বা ৫ম প্রজন্মের ফাইটার বিমানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে, কারণ এই বিমানগুলো রাডারে সহজে ধরা পড়ে না।
সব মিলিয়ে, এফ-৭ বিজিআই বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য একটি কার্যকর এবং খরচ-সাশ্রয়ী সমাধান হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, বিশেষ করে দেশের প্রতিরক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজনে। তবে ভবিষ্যতের আধুনিকীকরণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আরও উন্নত প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান সংগ্রহের দিকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নজর রয়েছে।
এসআর/এসএম