মালদিভিয়ানে জিম্মি ছিলেন প্রবাসীরা, স্বস্তি নিয়ে এলো ইউএস-বাংলা
![মালদিভিয়ানে জিম্মি ছিলেন প্রবাসীরা, স্বস্তি নিয়ে এলো ইউএস-বাংলা](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2021October/us-bangla-airlines-boein-202109221549301-202111242028061-20211211161001.jpg)
মালদ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ লাখ। এর মধ্যে বাংলাদেশি রয়েছে প্রায় ১ লাখ। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৫৫০ জন প্রবাসী শ্রমিক ও পর্যটক বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপে যাতায়াত করেন। এতদিন ঢাকা থেকে মালদ্বীপ যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল মালদিভিয়ান এয়ারলাইন্স।
মালদ্বীপের এ এয়ারলাইন্সটি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা থেকে ভারতের চেন্নাই হয়ে মালদ্বীপে ফ্লাইট পরিচালনা করত। প্রবাসীদের অভিযোগ, এ রুটে এতদিন একা ফ্লাইট পরিচলনা করায় একক আধিপত্য বিস্তার করেছে মালদিভিয়ান। তাদের ভাড়া যেমন বেশি ছিল, তেমনি বাংলাদেশি যাত্রীদের প্রতি তাদের কর্মীদের আচরণও খারাপ ছিল।
বাংলাদেশের বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি সূত্রে জানা গেছে, এতদিন মালদ্বীপ রুটে মালদিভিয়ানের ওয়ানওয়ে ভাড়া ছিল ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। ক্ষেত্র বিশেষে এ ভাড়া ৫০-৫৫ হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকত। গত ১৯ নভেম্বর ফ্লাইট চালু করা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স বর্তমানে রিটার্ন টিকিটসহ (যাওয়া-আসা) মূল্য নিচ্ছে প্রায় ৪৬ হাজার টাকা। তাই প্রবাসী ও পর্যটকরা বর্তমানে মালদ্বীপে আসা-যাওয়ার জন্য ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সকে বেছে নিচ্ছেন।
গাজী রাকিব উদ্দিন নামে এক মালে প্রবাসী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে মালদিভিয়ানে মালদ্বীপ আসা-যাওয়া করতাম। অনেকসময় রিটার্ন ভাড়া ৮০-৯০ হাজার টাকাও লাগত। একচেটিয়া ভাড়া নিত তারা। পাশাপাশি মালদিভিয়ান ৩০ কেজি ওজনের ব্যাগেজ সুবিধা দিত। কেউ ৩১ কেজি ওজন নিলেই অতিরিক্ত মালামাল ফেলে দিত। আমাদের কোনো আবেদনেই সাড়া দিত না তারা। এখন ইউএস-বাংলা ৪০ কেজির বেশি মালামাল বহনের সুযোগ দিচ্ছে।
মোহাম্মদ রাফাতউল্লাহ নামে আরেক প্রবাসী বলেন, বর্তমানে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স প্রবাসীদের জন্য ৪০ কেজি বুকিং ব্যাগেজ ও ৭ কেজি হ্যান্ড ব্যাগেজ সুবিধা দিচ্ছে। তাদের দেখে এখন মালদিভিয়ানও একই সুবিধা দিচ্ছে। তবে প্রবাসীরা মালদিভিয়ানকে বর্জন করছেন। আমরা সবাই ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সেই যাতায়াত করব। আমরা বাংলাদেশিরা যদি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের যাতায়াত না করি আর ইউএস-বাংলা যদি মালদ্বীপে প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে তাহলে মালদিভিয়ান এয়ারলাইন্স আমাদের সঙ্গে আগের মতোই আচরণ করবে।
মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সরকার নামে এক প্রবাসী বলেন, এতদিন মালদিভিয়ান এয়ারলাইন্স ফায়দা লুটে নিয়েছে। তারা আমাদের কাছ থেকে ওয়ানওয়ে টিকিটের দাম ৮-৯ হাজার মালদিভিয়ান রুফিয়া (১ রুফিয়া সমান বাংলাদেশি ৫ টাকা) নিয়েছে। আর কোনো এয়ারলাইন্স না থাকায় আমাদের বাধ্য হয়ে যেতে হয়েছে মালদিভিয়ানে। কিন্তু এখন ইউএস-বাংলা চলে এসেছে। আমরা সবাই ইউএস-বাংলায় যাতায়াত করব। তা না হলে মালদিভিয়ান আবারও ফায়দা লুটবে।
ইউএস-বাংলার এ মাইলফলক সিদ্ধান্তের বিষয়ে মালদ্বীপে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত রিয়ার অ্যাডমিরাল নাজমুল হাসান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমদের প্রবাসী ভাইয়েরা বেশি ভাড়া দিয়ে দেশে যাতায়াত করতেন। ফ্লাইট চালুর জন্য আমরা অনেকবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে জানিয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবেও অনুরোধ করেছি। দুঃখজনকভাবে সেটা সফল হয়নি। ইউএস-বাংলা মালদ্বীপে ফ্লাইট শুরু করেছে। সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার কারণে অন্য এয়ারলাইনসের টিকিটের দামও কমেছে। এতে শ্রমিকদের অনেক অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে।’
দেশের একমাত্র এয়ারলাইনস হিসেবে ইউএস-বাংলা প্রতি শুক্র, রবি ও মঙ্গলবার ঢাকা-মালে রুটে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা-মালে রুটে সকল প্রকার ট্যাক্স ও সারচার্জসহ ওয়ানওয়ের ন্যূনতম ভাড়া ২৯ হাজার ৫০৮ টাকা এবং রিটার্ন ভাড়া ৪৫ হাজার ৫৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া মালদ্বীপ ভ্রমণে ইউএস-বাংলা হলিডে প্যাকেজও ঘোষণা করেছে।
এদিকে প্রবাসী বাংলাদেশি ও পর্যটকদের জন্য এই রুটে আরও বেশি ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে ইউএস-বাংলার। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, মালদ্বীপে বর্তমানে সপ্তাহে তিন দিন ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী ভবিষ্যতে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
এআর/এসকেডি/জেএস