ক্যাট-ভিকির বিয়েতে গোশতের টুকরা নিয়ে হাউকাউ
ভিকির ফুপা এনায়েত কৌশল খেতে বসে প্রথমে হাউকাউ শুরু করেন। তার অভিযোগ ছেলে পক্ষের পাতে পর্যাপ্ত গোশতের টুকরা দেয়া হয়নি। এমনকি গোশতের বাটিতে গোশতের পরিবর্তে ছিল ত্যাল আর হাড্ডি গুড্ডি।
ভিকির চাচা ফজলু কৌশলের কনিষ্ঠ পুত্র সুলতান কৌশল ( বয়স আড়াই মাস ) প্লেটে তিন পিস রোস্ট চাইলে বাচ্চাকে এক পিসই দেওয়া হয়। ওই টেবিলে খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে ছিলেন ক্যাটরিনার চাচাতো ভাই সাগর কাইফ। তিনি বলেন, আড়াই মাসের বাচ্চা রোস্ট খাইব কেমনে! যা দেয়া হইব অই ডাই নষ্ট হইব!
পাত্র পক্ষ এতে ক্ষেপে ওঠে। রেজালার বাটি ছুঁড়ে মেরে ভিকির ফুপা এনায়েত কৌশল বলেন, বিয়াতে পাত্র পক্ষেরই কোনো দাম নেই। শালা বিয়াই খাইতাম না।
পরে ক্যাটরিনার বাবা জনাব খসরু কাইফ ভিকির ফুপা আর চাচার হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে তাদের শান্ত করেন। সুলতান কৌশল পাতে চার পিস রোস্ট তুলে দেন। দুধের বাচ্চা সুলতান, রোস্টের বদলে ফিডারেই অধিক মনযোগী ছিল। রোস্টের পিস গুলো উঠে আসে ভিকির চাচি জামিলা কৌশলের ভানিটি ব্যাগে করে আনা টিফিন বক্সে।
ওইদিকে কাবিনের সময় আরেক গণ্ডগোলের সৃষ্টি হয়। দেনমোহরের অর্থ নির্ধারণে দুই পক্ষ তুমুল বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। ক্যাটরিনার মামা জগলুল কাইফ দেনমোহর পনেরো লাখ এক টাকা দাবী করে বসে, ওইদিকে ভিকির চাচা ফজলু কৌশল বলেন, দেনমোহর হইব আড়াই লাখ। তখন ক্যাটরিনার খালা শিরিন কাইফ ফোড়ন কাটেন, ‘এতো ছোটলোক বংশ জানলে তো এই জায়গা আমগোর ক্যাটরিনার সম্বন্ধই করতাম না! কাবিনের সামান্য কয়টা টাকা নিয়াও ছোটলোকি!’
শিরিন খালার এরূপ বেফাঁস মন্তব্যে পাত্র পক্ষ আবার গরম হয়ে উঠে। ভিকির পাঞ্জাবি টান দিয়ে ভিকির ফুপু বলেন, ‘আমাদের সোনার টুকরা পোলা যে এমন পাটকাঠির মত মাইয়াডারে বিয়াতে রাজি হইছে এইটাই তো কাইফ পরিবারের সাত জন্মের ভাগ্যি! চোখ ছোট, গাল ভাঙ্গা, তালগাছের মত লম্বা। মাইয়ার তো বিয়াই হইতাছিল না। আইবুড়ি।’
এদিকে ক্যাটরিনার বড় ভাবী হামিদা কাইফ তেড়ে আসেন, বলেন, মুখ সামলাইয়া বাৎচিত করেন। আমগোর মাইয়া পোলার চাইতে বেশি কামাই করে। আমাগোর মাইয়া পোলারে তিনবার কিনতে বেচতে পারব। হু!
এতে ভিকির ছোট ভাবী পারভিন কৌশল চিৎকার করে উঠেন, ‘কিইইই এতো বড় অপমান। জামাইরে কামাইয়ের খুটা! বিয়াই দিতাম না এখানে। ল ভিকি উঠ।’
পরে দুই পক্ষের এরূপ ফাটাফাটির পর্যায়ে মুরুব্বী হিসেবে ভিকির দাদাজান আলহাজ্ব ইলিয়াস কৌশল আর ক্যাটরিনার নানাজান সাইদুল কাইফ এগিয়ে আসেন।
ইলিয়াস কৌশল বলেন, দেনমহর এইটা স্ত্রীর হোক। পাত্রের সামর্থ্য অনুযায়ী দেনমোহর দিতে হবে। পাত্রীর সুরক্ষা যেমন নিশ্চিত করতে হবে তেমনি পাত্রের ওপর জুলুম করেও আদায় করা যাবে না। দশ লাখ এক টাকার বিনিময়ে দেনমোহর ধার্য করেন, উসুল পাঁচ লক্ষ টাকা, গয়নাসহ।
মুরুব্বি যখন কথা বলছে অন্যরা গাইগুই করলেও তা মেনে নেয়। এভাবে বিস্তর ঝামেলার পর ক্যাটরিনা আর ভিকির বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়েতে উপহার হিসেবে উঠেছে-
৬ টা ডিনার সেট ( আঠার পিস চারটা, একটা চব্বিশ পিস, একটা বত্রিশ পিসের )
৫ টা রাইস কুকার
২ টা ফিন্নি সেট
৩ টা ব্লেন্ডার মেশিন
২ টা ইলেকট্রিক ইস্ত্রি
১ টা সোনার চেইন
১ সেট মেলামাইনের বাটি
২ টা সিল্কের শাড়ি
১ টা বেডশিট ( সাদা )
১ টা ফিল্টার মেশিন ( ইউনিলিভারের ৩০০০ লিটার)
আর নগদ বারো হাজার তিনশ সতেরো টাকা। ( তিনশো সতেরো টাকা কে দিছে তাকে খোঁজা হচ্ছে )
হানিমুনের জন্য সোহাগ এসি বাসের দুইটা টিকিট কাটা হইছে। আজ রাত ১০ টায় সোহাগের মালিবাগ বাস কাউন্টার থেকে নবদম্পতি কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বে। ওরা সকলের আশীর্বাদ চেয়েছে।