দ্বিতীয় দিনেও তালাবদ্ধ পাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার অফিস

১৭ দফা দাবিতে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) রেজিস্ট্রার অফিস তালাবদ্ধসহ কর্মকর্তাদের অবস্থান কর্মসূচি দ্বিতীয় দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে। ফলেও রোববারও (২৭ ফেব্রুয়ারি) অফিসে প্রবেশ করতে পারেননি রেজিস্ট্রারসহ অফিসের কর্মকর্তারা।
এদিকে চুপিসারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলী ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গেলে অনেকটা উপাচার্য-সংকটে ভুগছে বিশ্ববিদ্যালয়। আগামী ৬ মার্চ উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগেই আন্দোলনের মুখে গত বৃহস্পতিবার রাতে গোপনে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান তিনি।
রোববার সকাল থেকে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় রেজিস্ট্রার অফিসে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান নেন কর্মকর্তারা। তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তালা খোলা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।
পাবিপ্রবির অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা দ্বিতীয় দিনের মতো রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছি। রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম স্যার এলে তাকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমরা জিজ্ঞাসা করলেও আমাদের দাবিগুলোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য না করে ফিরে গেছেন।
বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়ে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সোহাগ হোসেন বলেন, আমাদের আগে মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার আমরা ১৭ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমাদের সঙ্গে উপাচার্য স্যার বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো প্রতিনিধি সমাধানে আসেননি। আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা বড় ধরনের আন্দোলনে যাব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, গোপনে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যাওয়ার পর সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন উপাচার্য। আরও সাত দিনের মতো তার দায়িত্ব থাকলেও তিনি কোনো কার্যক্রম অংশগ্রহণ করছেন না। আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সমঝোতা করতে ব্যর্থ হয়ে তিনি ঢাকাস্থ পাবিপ্রবির কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন। এখন রাজশাহীতে অবস্থান করছেন বলেও একাধিক সূত্র জানিয়েছে। ফলে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার সম্ভাবনা খুব কম।
এ বিষয়ে উপাচার্য ড. এম রোস্তম আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এর আগের শনিবার সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কী কাজ? আমার সাথে আপনাদের আর কোনো কাজ নেই।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, উপাচার্য মহোদয় একের পর এক ভুল করেছেন। কিছু সুবিধাবাদী ও দুষ্ট লোকের খপ্পরে পড়ে গত চার বছরে বিতর্কিত সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এখন বিদায়বেলা অসহায়ের মতো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এটা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের জন্য লজ্জাজনক। এর ফলে সমাজে শিক্ষকদের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। উপাচার্যদের কর্মকাণ্ড এমন হওয়া উচিত নয়।
পাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কর্মকর্তাদের আন্দোলনের বিষয়টি আমি উপাচার্য স্যারকে জানিয়েছি। তিনি এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেননি। আমি রেজিস্ট্রার দপ্তরের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতেও পারছি না। তবে অন্যান্য দফরের কার্যক্রম চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, স্যার চলে যাওয়ার পর আর কোনো কার্যক্রমে তিনি অংশগ্রহণ করেননি, আমাদের কোনো নির্দেশনাও দিচ্ছেন না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাগজপত্র রেডি করে স্বাক্ষর-অনুমোদনের জন্য উপাচার্য স্যারের রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
রাকিব হাসনাত/এনএ