ছাত্র নির্যাতনের ঘটনায় ১ জন বহিষ্কার, বিপাকে হল প্রভোস্ট
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী সাগর চন্দ্র দেকে রোলিং চেয়ারে ঘুরিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় চারুকলা বিভাগের সৌমিক জাহান নামে এক ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সৌমিক ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।
এদিকে সৌমিকের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শাখা ছাত্রলীগের একাংশ। একইসঙ্গে অগ্নিবীণা হলের প্রভোস্ট কল্যাণাংশু নাহারের পদত্যাগ দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অনুসারীরা।
সোমবার (২১ মার্চ) দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ করে তারা। পরে অগ্নিবীণা হলের প্রভোস্ট কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয় আন্দোলনরত ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা।
গত ১২ মার্চ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হলের ২০৪ নম্বর কক্ষে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সংগীত বিভাগের নবীন এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এনিয়ে প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ওপর শাস্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভুক্তভোগী সাগর চন্দ্র দের মাথা ও মুখে গুরুতর আঘাত পেয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
সাগর চন্দ্র দেকে নির্যাতনের ঘটনায় সৌমিক জাহানকে সাময়িক বহিষ্কার এবং আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কেন তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তা জানতে চেয়ে চিঠি ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়া অগ্নিবীণা হলের ২০৪ নং কক্ষের তালিকাভুক্ত চার শিক্ষার্থী রাজু মিয়া, নাজমুল হুদা দেওয়ানী, আফজাল হোসাইন শান্ত এবং খন্দকার রিফাদুল হাসানের হলের সিট বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে বাতিল করা চার শিক্ষার্থীর তিনজনই পড়াশোনা শেষ করে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করলেও একাডেমিক সার্টিফিকেট না নেওয়ায় এখনো প্রশাসনিকভাবে ছাত্রের তালিকাতেই রয়েছেন সিট বাতিল করা ৪ শিক্ষার্থীর ৩ জন। অন্যদিকে সিট বাতিল হওয়া শিক্ষার্থী আফজাল হোসাইন শান্তর ত্রিশালে বাড়ি থাকায় হলে থাকেন না। তবে তার নামে সিট বরাদ্দ রয়েছে। সেখানেই নিয়মবহির্ভূতভাবে থাকত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
অগ্নিবীণা হলে এ চার শিক্ষার্থীর সিট বাতিলের বিষয়ে এবং প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভের বিষয়ে গণমাধ্যমকে হলটির প্রভোস্ট কল্যাণাংশু নাহার বলেন, প্রশাসনিক নিয়ম অনুযায়ী সিট বাতিল করা হয়েছে। পড়াশোনা শেষ হলেও এখনো তার সিট বাতিল করাননি, এমনকি সনদও উত্তোলন করেননি। তাই তদন্তে সিটের দাপ্তরিকভাবে দাবিদার যারা তাদের সিট বাতিল করেছি। এটা কোনো শাস্তি নয়। আমার রুমে কেনে তালা দিয়েছে ও পদত্যাগ দাবি করছে তা আমি জানি না। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকি যখন থেকে আমার জন্যে ডরমিটরিতে রুম বরাদ্দ হয়েছে।
তবে অভিযোগ রয়েছে হলটির প্রভোস্ট নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করার কথা থাকলেও নিয়ম না মেনে তিনি থাকেন ময়মনসিংহ শহরে।
শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় আহত সাগরের সব ব্যয় নির্যাতন করা শিক্ষার্থী সৌমিক জাহানের পরিবারকে বহন করতে হবে। এ ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে হলে অবস্থান করায় সাগর চন্দ্র দেকে সতর্কী করে চিঠি প্রেরণ এবং ২১ দিনের মধ্যে তার উত্তর দিতে বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় শাস্তি প্রদানের পর তা প্রত্যাহারের জন্যে আন্দোলন শুরু করলেও বর্তমানে সেটি প্রভোস্টের প্রত্যাহার দাবিতে রূপ দিয়েছে ছাত্রলীগের একাংশ। ফলে বেশ বিপাকেই আছেন হল প্রভোস্ট।
উবায়দুল হক/আরআই