টিএসসির নামাজের স্থানে তালা, প্রশাসন বলছে সাময়িকভাবে বন্ধ

Dhaka Post Desk

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ঢাবি

১৩ এপ্রিল ২০২২, ০৪:৩৪ পিএম


টিএসসির নামাজের স্থানে তালা, প্রশাসন বলছে সাময়িকভাবে বন্ধ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) প্রথমবারের মতো ছাত্রীদের নামাজ পড়াকে কেন্দ্র করে নামাজের স্থানে তালা দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) ভোরে এ ঘটনা ঘটে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে টিএসসিতে নামাজ পড়া সাময়িক বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে টিএসসি কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুরে টিএসসিতে নামাজের স্থানে প্রবেশের মূল গেটে তালা ঝুলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখানে নিয়মিত নামাজ পড়লেও তালা দেওয়ার কারণে সেখানে নামাজের জন্য প্রবেশ করতে পারছে না কেউই। নামাজ পড়তে এসে ঘুরে যেতে দেখা গেছে অনেককেই। এ নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

এর আগে গতকাল ছেলেদের নামাজের পাশে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় পার্টিশন এবং পর্দা টাঙিয়ে যোহরের নামাজ আদায় করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রী। টিএসসি কর্তৃপক্ষ বাধা দিয়ে ১০ দিনের সময় চাইলেও তা প্রত্যাখ্যান করেন তারা। যার ফলে এটিকে ‘বাড়াবাড়ি’ উল্লেখ করে ছেলেদের নামাজ পড়ার স্থানও সাময়িক বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিসা ইসলাম সাকাফি বলেন, টিএসসিতে নামাজ পড়তে এত বাধা কেন। এভাবে নামাজের স্থানে তালা দেওয়া কি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত নয়? যারা এ জঘন্য কাজ ঘটিয়েছে তাদের পরিচয় দ্রুত উন্মোচন এবং জবাবদিহি করতে বাধ্য করা হোক।

গতকাল টিএসসিতে ছাত্রীদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করতে সহযোগিতা করা ছাত্র অধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি আসিফ মাহমুদ বলেন, যারা নামাজের বিরুদ্ধে, হিজাবের বিরুদ্ধে প্রোগ্রাম করে মোল্লাতন্ত্রের কবর রচনা করতে চায় তারাই এটি ঘটিয়েছে বলে আমরা মনে করি। আর সেখানে টিএসসি কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে। আমরা এটি নিয়ে টিএসসি পরিচালকের সঙ্গে কথা বলব।

ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ আলী আকবর ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল আমরা সময় চাইলেও তারা আমাদের কথা শুনেননি। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যবস্থা নিয়েছেন। টিএসসির নামাজের স্থান সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, টিএসসি সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজের জায়গা। এখানে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক না। আমাদের কাছে খবর আছে এখানে ধর্মীয় উসকানি দেওয়া হচ্ছে। কেউ এখানে উগ্রতার বহিঃপ্রকাশ ঘটালে শক্তভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই জায়গার পরিবর্তে সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজ পড়ার পরামর্শ দেন উপাচার্য।

গত ৫ এপ্রিল দুপুরে টিএসসিতে নামাজের স্থান বরাদ্দের দাবি জানিয়ে উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছিলেন কয়েকজন ছাত্রী। উপাচার্য সেসময় দাবিটিকে ভালো এবং টিএসসি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেছেন বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছিলেন।

এরপর টিএসসিতে নামাজের স্থানের দাবিকে ধর্মান্ধ-প্রতিক্রিয়াশীল ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অপতৎপরতা দাবি করে গত ৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্রলীগ।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘মোল্লাতন্ত্রের বলি হওয়ার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসিনি; মোল্লাতন্ত্রের কবর রচনার জন্যই আমাদের আসা।’

তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী ও তাঁবেদার গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।

এইচআর/এসএম

Link copied