ঢাকা কলেজ

দিন যায়, মাস যায় তবুও ময়লা-আবর্জনা সরে না

Dhaka Post Desk

ঢাকা কলেজ প্রতিবেদক

২৬ জুলাই ২০২২, ১১:৩৪ এএম


দিন যায়, মাস যায় তবুও ময়লা-আবর্জনা সরে না

ঢাকা কলেজের তিনটি ছাত্রাবাসের উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার দীর্ঘ ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও ছাত্রাবাসের সামনেই পড়ে আছে ময়লা-আবর্জনা ও উচ্ছিষ্ট। সেসব আবর্জনার স্তূপে জন্মেছে আগাছা। ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে জন্মাচ্ছে মশা। দেখা দিচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। তবুও আবর্জনা সরানোর উদ্যোগ নিচ্ছে না কলেজ প্রশাসন। তারা দায় চাপাচ্ছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওপর। অপরদিকে খোঁজ নেই ঠিকাদারদের। দীর্ঘদিনেও উচ্ছিষ্ট আবর্জনা সারানোর কোনো উদ্যোগ নেই তাদেরও। উন্নয়ন কাজের এসব আবর্জনা কে সরাবে তা নিয়ে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের আবাসিক এলাকার আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ছাত্রাবাস ও পশ্চিম ছাত্রাবাসের সামনে এবং শহীদ ফরহাদ হোসেন ছাত্রাবাসের পাশে ময়লার স্তূপ। এই স্তূপে ছাত্রাবাসের উন্নয়ন কাজের বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট, ভাঙা টাইলস, ইট, সুরকি পড়ে আছে। অথচ এসব সংস্কার কাজ করা হয়েছে আরও ১০ মাস আগে। করোনার দীর্ঘ ছুটির পর শিক্ষার্থীরা আবার ফেরার আগে এসব ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়েছে ছাত্রাবাসের সামনে। সেই হিসাবে ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে একই জায়গায় পড়ে আছে এসব আবর্জনা।

কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের সঙ্গে যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জড়িত তাদের দায়িত্ব হচ্ছে কাজ শেষ হওয়ার পর উচ্ছিষ্ট-আবর্জনা সরিয়ে দেওয়া। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার পরও এসব আবর্জনা সরিয়ে নিতে ঠিকাদারদের আগ্রহ দেখা যায়নি। বারবার তাগিদ দিয়েও কাজ করানো যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে কলেজ কর্তৃপক্ষও অনেকটা নিরুপায়।

dhakapost

অপরদিকে কর্তৃপক্ষের অপারগতা ও উদাসীনতার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক এলাকায় ময়লা আবর্জনার স্তূপ পড়ে থাকাটা প্রশাসনের অবহেলা। তাদের যথাযথ তদারকির অভাবে এমন দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার ১০ মাস পরও  ময়লা আবর্জনা হলের সামনে পড়ে থাকাটা দুঃখজনক। মাসের পর মাস একই জায়গায় আবর্জনার স্তূপ জমে আছে অথচ সংশ্লিষ্ট হল তত্ত্বাবধায়ক, উন্নয়ন কমিটি এবং ছাত্রাবাস কমিটির কোনো দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেই।

সাইফুল ইসলাম নামের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষার্থীরা লকডাউনের পর ছাত্রাবাসে ফেরার আগে এসব কাজ শেষ হয়েছে। তবু দীর্ঘদিনেও আবর্জনা সরানো হয়নি। ১০ মাসেরও বেশি সময় হয়েছে এ অবস্থা। কি করে এত দিন ধরে ময়লা স্তূপ করে রাখা হয়েছে সেটি বোধগম্য নয়। শিক্ষকরা এসব আবর্জনা দেখেও হয়ত না দেখার ভান করেন। অপরদিকে দীর্ঘদিন ধরে এসব আবর্জনার স্তূপ দেখে আমাদের কাছেও মনে হচ্ছে আবর্জনা থাকতেই পারে।

মিতুল হাসান নামের আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকা কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানে আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা। হল থেকে বের হলেই এসব ময়লা আবর্জনা চোখে পড়ে। দেখে অনেক খারাপ লাগে। মনে হয়, দেখার কেউ নেই।

কেন দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রাবাসের সামনে আবর্জনার স্তূপ ফেলে রাখা হয়েছে— এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে রাজি হননি পশ্চিম ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক কলেজের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নুকুল চন্দ্র পাল। তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না জানিয়ে কলেজের উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন কলেজের উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক অখিল চন্দ্র বিশ্বাসও। তিনি বলেন, ঠিকাদারদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার পরও তারা কেন কাজ সমাপ্ত করছে না সেটি আমার জানা নেই। পশ্চিম ছাত্রাবাসের নিয়মিত কাজও আটকে আছে। আমরা সবসময়ই ময়লা সরিয়ে নিতে তাগাদা দিচ্ছি। এটা কলেজের দায়িত্ব না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে।

dhakapost

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ও ছাত্রাবাস আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এ টি এম মইনুল হোসেন বলেন, কাজ শেষ হওয়ার পরও ময়লা ফেলে রাখার বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা ঠিকাদারদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেছি এবং ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তাছাড়া আবর্জনা ফেলে দেওয়ার দায়িত্ব হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের। কলেজ প্রশাসন এই আবর্জনার দায়ভার নিতে পারে না। আমরা চেষ্টা করব দ্রুতই যেন তাদের মাধ্যমে আবর্জনা পরিষ্কার করা যায়।

তবে কাজ বাকি থাকায় আবর্জনা সরানো হয়নি বলে জানান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মনোয়ার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মনোয়ার হোসেন খোকন। তিনি বলেন, কিছু কাজ বাকি থাকায় আমরা আবর্জনা সরাতে পারিনি। দ্রুতই আবার কাজ ধরা হবে।

১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে সংস্কার কাজের আবর্জনা ছাত্রাবাসের সামনে কেন ফেলে রাখা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবারের কাজ হলে একসঙ্গে সব সরিয়ে দেব। ঈদের পরই কাজ ধরার পরিকল্পনা আমার আগে থেকেই ছিল।

এ বিষয়ে কথা বলতে অপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাহবুব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

আরএইচটি/এসএসএইচ

Link copied