শিক্ষককে অব্যাহতি, ঢাবির সাদাদলের সভায় হট্টগোল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সভায় হট্টগোল হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষক লাউঞ্জে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, সাদা দলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ইউনিট থেকে নাম প্রস্তাব প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ শাখা সাদা দলের সভা ডাকা হয়। সভায় মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান এ বি এম শহীদুল ইসলাম এবং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমানের পুরনো একটি ‘মীমাংসিত’ দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
সাদা দল সূত্রে জানায়, গত ১৫ জুন জার্নাল কমিটির সভায় মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান এ বি এম শহীদুল ইসলাম ও অধ্যাপক মিজানুর রহমানের মধ্যে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। শহীদুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে সাদা দল ব্যবসায় অনুষদ শাখার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অধ্যাপক মিজানুর রহমান চার দিনের সফরে কানাডায় থাকাকালীন এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ জুন মাগরিবের নামাজের পর তড়িঘড়ি করে দলের অধিকাংশ সদস্যের অনুপস্থিতিতে এবং একজন সদস্যের নোট অব ডিসেন্ট নিয়ে ড. মিজানের সদস্যপদ ‘সাময়িক স্থগিত’ রাখা হয়। এরপর ১ অক্টোবর মার্কেটিং বিভাগের চেয়ার অধ্যাপক শহীদুল অধ্যাপক মিজানের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ লিখিতভাবে প্রত্যাহার করে নেন।
অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়ার ফলে গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যবসায় অনুষদ শাখা সাদা দলের সভায় অধ্যাপক মিজানুর রহমান হাজির হলে দুই-তিনজন শিক্ষক অধ্যাপক মিজানের উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি তোলেন। তবে উপস্থিত অন্য ৯ জন শিক্ষক মিজানের উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি তোলেননি। এ সময় ‘অফিশিয়ালি’ কোনো সিদ্ধান্ত না জানানো এবং যে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক মিজানকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, সে অভিযোগ প্রত্যাহার সত্ত্বেও কেন তার অব্যাহতি প্রত্যাহার হবে না’ তা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান অভিযোগ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ, কী কারণে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে আমি কিছুই জানি না। আমার কোনো বক্তব্যও শোনা হয়নি। এছাড়া যিনি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিলেন তিনি সে অভিযোগ প্রত্যাহারও করেছেন। অফিসিয়ালি যেহেতু আমাকে কিছুই জানানো হয়নি, সেহেতু সাদা দলের মিটিংয়ে যোগ দেওয়ার অধিকার আমার আছে। এ কারণে যথারীতি আমি গতকালের সভায় হাজির হই। কিন্তু কয়েকজন সদস্য আমার সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করেন।
সভায় উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাদা দলের একজন শিক্ষক ঢাকা পোস্টকে বলেন, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন অনেক জুনিয়র হওয়া সত্ত্বেও অধ্যাপক মিজানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। অন্য কয়েকজনও গালাগালি করেছেন তবে আল আমিন বেশি করেছেন। যেটি কখনই উচিত নয়।
তবে গালিগালাজের অভিযোগ অস্বীকার করে সাদা দলের শিক্ষক আল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল আমাদের পূর্ব নির্ধারিত মিটিং ছিল। যেহেতু তিনি (অধ্যাপক ড. মিজান) সাময়িক বহিষ্কার তবুও মিটিংয়ে আসলে আহ্বায়ক তাকে চলে যেতে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি যেতে চান না। পরে এজেন্ডা অনুযায়ী আলোচনা শুরু করলে কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, তিনি সামনে থাকলে সাংগঠনিক আলোচনা করতে সমস্যা হবে। পরে এক পর্যায়ে একজন সিনিয়র শিক্ষকের সঙ্গে তার বাদানুবাদ হয়ে যায়। পরে আমিও মিজান স্যারকে বিনয়ের সঙ্গে চলে যেতে বলি। এটিই ছিল মূলত ঘটনা।
ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, তাকে ‘যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পরে যে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে সেটা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে বলেও জেনেছি। এখন দলের ফোরামে তুলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি সাদা দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমি সাংবাদিক এবং পত্রিকা মারফত জেনেছি। ব্যবসা শিক্ষা অনুষদ সাদা দল বিষয়টির ব্যবস্থা নেবে। যদি তারা কেন্দ্রীয় কমিটি বরাবর লিখিতভাবে অবহিত করে তাহলে আমরা বিষয়টা দেখব।
এইচআর/এসকেডি