‘ইতিহাস লিখছি, তবে জীবদ্দশায় প্রকাশ পেলে ছেলেসহ আমাকে মেরে ফেলবে’

Dhaka Post Desk

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, জাবি

২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:১৬ পিএম


‘ইতিহাস লিখছি, তবে জীবদ্দশায় প্রকাশ পেলে ছেলেসহ আমাকে মেরে ফেলবে’

উপাচার্য থাকাকালীন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা নিয়ে বই লেখা শুরু করেছেন বলেন সম্প্রতি জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। তবে জীবিত অবস্থায় বইটি প্রকাশ পেলে ছেলেসহ তাকে মেরে ফেলার আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, কেন গত নয় মাসে একটা আন্দোলনও হয়নি। আর কেনইবা আমি যখন ২০১৪ সালে প্রথম দায়িত্ব নিলাম সেদিনই গুলি ফুটানো হলো। আমি তো নির্বাচন করেই এসেছিলাম। কিন্তু সেদিকে এটেনশন না রেখে কেন সকল এটেনশন নেওয়া হলো এমএইচ হলের দিকে? ইতিহাস অন্যরকম। এখন আমি সেই ইতিহাস লিখছি। তবে সেই ইতিহাস বস্তাবন্দী করে এমন জায়গায় রাখবো যাতে আমার জীবদ্দশায় বের না হয়। কেননা আমার জীবদ্দশায় বের হলে তারা তো আমাকে মারবেই আমার ছেলেকেও মারবে।

তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ও সরকার রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানের ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই সময়ের প্রক্টর আমাকে রক্ষা করেনি। কিন্তু বর্তমান প্রশাসনকে রক্ষা করে যাচ্ছেন। এই ভিসি কীভাবে এসেছে? তার প্রো-ভিসি হওয়ার সময় আমি কি তার জন্য সুপারিশ করিনি?

উন্নয়ন প্রকল্পের ২ কোটি টাকার দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যে টাকা ছাড় হয়নি সেই টাকা আমি কীভাবে খরচ করে ফেললাম? এটা বলা ঠিক না। এটা যদি আমার সময়ে কেউ করে থাকে কাউকে খুশি করতে, এর দায়-দায়িত্ব আমি নেব না।

তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের ব্যাপারে ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘দুদক তদন্ত করেছে না কে করেছে, কোন দিল আফরোজা বেগম (ইউজিসি সদস্য) কী বলেছে সেসব আমার কানে এসেছে। উনি তো আমাদের সবকিছুতেই বাধা দেন।’

দর্শন বিভাগের ৬ জন শিক্ষক নিয়োগের প্রসঙ্গ তুলে সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ‘দর্শন বিভাগে ছয়জন শিক্ষক নিয়োগের বোর্ডটাকে তিনি (দিল আফরোজা বেগম) বাধা দিয়েছিলেন নিয়মকানুন জানেন না বলে। আমরা হাইকোর্টে আপিল করে সেটা ছাড় পাই। সবসময় যে ইউজিসির মেম্বাররা আমাদের চেয়ে বেশি জানেন এটা নয়। কেননা উনারা পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে পড়েননি।’

আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, এ বিষয়ে সাবেক এই উপাচার্যের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমাবর্তন প্রতিবছর হওয়া উচিত। আমি এর আগেও এটা বলেছি। কিন্তু আমার সময় বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ ছিল। কেউ আমাকে প্রটেক্ট করেনি। প্রো-ভিসিরাও আমাকে প্রটেক্ট করেনি, প্রক্টরও আমাকে প্রটেক্ট করেনি। এত আন্দোলন তখন কেন হয়েছে? এখন একবেলা আন্দোলন হয় না। এটার কারণ সাংবাদিকরা বের করতে পারলে তারা সার্থক হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পান অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। এরপর ২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতির আদেশে দেশের প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আচার্যের নির্বাহী আদেশে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পান ফারজানা ইসলাম। উপাচার্যের প্রথম মেয়াদে মোটামুটি সুষ্ঠুভাবে প্রশাসন চালাতে পারলেও দ্বিতীয় মেয়াদে সেই ধারাবাহিকতা রাখতে পারেননি তিনি।

নিয়োগ-বাণিজ্য, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এছাড়া ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা ‘ঈদ সেলামি’ দেওয়ার অভিযোগে কঠোর আন্দোলনের মুখে পড়েন ফারজানা ইসলাম। যে আন্দোলন উপাচার্যের দায়িত্বের শেষ অবধি চলমান ছিল।

মো. আলকামা/এমজেইউ

Link copied