ছিল কষ্টের সংসার, বাবার স্বপ্ন পূরণে বিচারক হলেন শাম্মী আক্তার

মধ্যবিত্ত পরিবারে মা চাইতেন আত্মনির্ভরশীল হতে। বাবা চাইতেন বিচারক হয়ে মানুষের সেবা করতে। কষ্টের সংসারে সব শখ পূরণ করে গেছেন তারা। প্রথমবার ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয়বার আর পেছনে তাকাতে হয়নি। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএসসি) নিয়োগ পরীক্ষায় সহকারী জজ পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন শাম্মী আক্তার। সারাদেশে মোট ১০৩ জন উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনি হয়েছেন ৬৩তম।
হার না মানা শাম্মী আক্তার তার সফলতার গল্প শুনিয়েছেন ঢাকা পোস্টের কাছে।
শাম্মীর বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার গংগারামপুর গ্রামে। তার বাবা মৃত কোরবান আলী ও মা রেনুফা বেগম। ৯ ভাইবোনের মধ্যে ৮ম তিনি। নিজ এলাকাতেই বেড়ে ওঠা শাম্মীর। তিনি কলমা হাইস্কুল থেকে জিপিএ-৪.৯৪ এবং শহীদ স্মৃতি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্সে সিজিপিএ-৩.৫৫ এবং মাস্টার্সে-৩.৮১ পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সমাপ্তি টানেন।
শাম্মী আক্তার বলেন, আমার বড় হওয়ার পেছনে বাবা-মায়ের অবদান অনস্বীকার্য। মধ্যবিত্ত পরিবারে মা চাইতেন আমি আত্মনির্ভরশীল হই এবং বাবা চাইতেন আমি বিচারক হই। কষ্টের সংসারেও আমার সব শখ পূরণ করে গেছেন তারা। আজ বাবার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তবে তিনি বেঁচে নেই।
আরও পড়ুন : যেভাবে সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় দেশসেরা আশিক
তিনি বলেন, আমার বোন সহকারী জজ হলেও ব্যক্তিগত কারণে অন্য চাকরিতে যুক্ত হয়েছিলেন। এরপর থেকে আমার বাবার স্বপ্ন ছিল আমি বিচারক হব। আর সেই স্বপ্নকে ছুঁতে নিরন্তর পরিশ্রম করেছি। অবশেষে সফল হয়েছি। তবে তিনি দেখে যেতে পারলেন না।
‘পরিশ্রমই সাফল্যের চাবিকাঠি’ এই উক্তির প্রতিফলন ঘটেছে শাম্মী আক্তারের ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, নিয়মিত পরিশ্রম আমার বিচারক হতে সবচেয়ে কাজে লেগেছে। আমি নিয়মিত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ধারাবাহিকভাবে পড়াশোনা করেছি। শেষের দিকে গ্রুপ স্টাডি করেছি যেটি খুবই কাজে লেগেছে। যে বিষয়গুলো বুঝিনি সেগুলো বড় ভাইয়া আপুদের কাছ থেকে জেনে নিয়ে বারবার পড়েছি। ১৪তম বিজেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভাইভা থেকে বাদ পড়েছিলাম। এ ব্যর্থতা চরম হতাশা এনেছিল। কোনো কিছু না পাওয়ার মাঝেই হতাশা থাকে। আমিও ব্যতিক্রম ছিলাম না। তবে কঠিন সময়গুলোতে আম্মুকে পাশে পেয়েছি।
বিচারক হিসেবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং নিজ গ্রামের জন্য কাজ করতে চান শাম্মী আক্তার। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার পায় না। আমি তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করব। এছাড়া সুযোগ পেলে আমার গ্রামকে নিয়ে কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করব।
যারা বিচারক হতে চায় তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিলাসিতা পরিহার করে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। প্রচুর ধৈর্য ও পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকতে হবে। অল্প হলেও প্রতিদিন পড়াশোনা করতে হবে। জীবন থেকে ছুটি ও অলসতা শব্দ বাদ দিতে হবে। পড়া বিষয়গুলো বারবার রিভিশন দিতে হবে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডল বলেন, আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিচারক হওয়ার স্বপ্ন থাকে। সফলতা পেতে পরিশ্রম আর অধ্যাবসায় করতে হয়। শাম্মীর এই সফলতা বিভাগের অন্য শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণা হবে। তাকে বিভাগের পক্ষ থেকে শুভ কামনা জানাই। আইন অঙ্গনে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখুক।
রাকিব হোসেন/আরকে/আরএআর