প্রক্টরসহ ১৬ জনের পদত্যাগ, নেপথ্যে ‘ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) প্রক্টরসহ ১৮টি পদ থেকে মোট ১৬ জন পদত্যাগ করেছেন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে চলছে আলোচনা- সমালোচনা। তবে নেপথ্যে ‘ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া’ এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সঙ্গে নানা বিষয়ে দ্বন্দ্বের ফলেই মূলত তারা পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন স্বয়ং উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। তিনি বলেন, তারা ৩ মাস আগে থেকেই বিভিন্ন জায়গায় মিটিং করছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসন বিরোধী কথা বলছে। যারা পদত্যাগ করেছে তাদের সবাইকে রবি (প্রক্টর) নিয়োগ দিয়েছে। তারা যা বলছে সব মিথ্যা।
তিনি আরও বলেন, তারা আমার কাছে বিভিন্ন কিছু দাবি করেছিল। তাদের দু’একজনের ব্যক্তিগত কিছু চাওয়া পাওয়া ছিল। এছাড়া নিয়োগ সংক্রান্তও কিছু দাবি দাওয়া ছিল, তা এখন বলবো না। আমি তাদের কথায় সায় দিতে পারিনি। তাদের এসব দাবি পূরণ না হওয়ায় এমনটা করেছে। তারা আমাকে ‘দেখে নেবে’ এ কথাও বলেছিল।
তবে কেউ কেউ বলছেন, মতবিরোধ হওয়ায় উপাচার্য নিজেই তাদের সরিয়ে দিয়েছেন। প্রক্টরের পদত্যাগের মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে নতুন প্রক্টর নিয়োগ দিয়েছেন। প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া ও সহকারী প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলাম গত ৯ মার্চ পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করেন। যা ১৫ তারিখ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল বলে জানান উপাচার্য।
এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, আমি জানতাম এমন কিছু ঘটতে পারে। তাই ভেতরে ভেতরে আমিও তাদের বিকল্প তৈরি করে ফেলেছি।
তবে বিষয়টিকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করে ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিভিন্ন সময় গবেষণার কাজ ও একাডেমিক ব্যস্ততার কারণে এ দায়িত্ব থেকে আরও আগেই সরে আসতে চেয়েছিলাম। তবে চেয়ার ছেড়ে দিলে অনেকে অনেক কথাই বলে। মূলত শিক্ষক সমিতির ২০২২-২৩ কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনের আগে শিক্ষকরা আমাদের কিছু যৌক্তিক দাবি জানিয়েছিল। নির্বাচনের পরে আমরা তা পূরণে কাজ করব বলে আশ্বাস দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন তা করতে পারেনি। আমি তখনই পদত্যাগ করতে চেয়েছিলাম। পরবর্তী সময়ে ২০২৩-২৪ কার্যনির্বাহীর নির্বাচনের সময় একই বিষয়গুলা নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলি। সেখান থেকেই মূলত দূরত্ব তৈরি হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পদত্যাগকারী জানান, চ্যান্সেলর কর্তৃক মনোনীত দুই সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. আবুল মনছুর ও অধ্যাপক ড. খাইরুল ইসলামের পরামর্শে চলছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। কিন্তু দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকা প্রক্টরিয়াল বডি ও অন্যান্য শিক্ষকদের গুরুত্ব দিচ্ছেন না তিনি।
আরেক পদত্যাগকারী প্রীতিলতা হলের আবাসিক শিক্ষক ফারজানা আফরিন রুপা পারিবারিক কারণে পদত্যাগ করেছেন বলে জানান।
উল্লেখ্য, রোববার (১২ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন প্রক্টরসহ ১৬ জন। পদত্যাগকারীরা হলেন-
প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুইয়া, সহকারী প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলাম, এসএএম জিয়াউল ইসলাম, ড. রামেন্দু পারিয়াল, গোলাম কুদ্দুস লাবলু, মোহাম্মদ শাহরিয়ার বুলবুল তন্ময়।
শহীদ আব্দুর রব হলের প্রভোস্ট ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া। ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক। শাহজালাল হলের আবাসিক শিক্ষক মোহাম্মদ শাহরিয়ার বুলবুল তন্ময়, এএফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষক আনাবিল ইহসান, প্রীতিলতার হলের আবাসিক শিক্ষক ফারজানা আফরিন রূপা, শহীদ আব্দুর রব হলের আবাসিক শিক্ষক ড. এইচএম আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, শহীদ আব্দুর রব হলের আবাসিক শিক্ষক রমিজ আহমেদ সুলতান, শামসুন নাহার হলের আবাসিক শিক্ষক শাকিলা তাসমিন, খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষক ড. মো. শাহ আলম, নাসরিন আক্তার ও উম্মে হাবিবা। আলাওল হলের আবাসিক শিক্ষক ঝুলন ধর।
উল্লেখ্য, ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়ার পদত্যাগের আধা ঘণ্টার মাথায় ইন্সটিটিউট অব মেরিন সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নূরুল আজিম সিকদারকে প্রক্টর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ওশানোগ্রাফি বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন ও মেরিন সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের প্রভাষক সৌরভ সাহা জয়কে সহকারী প্রক্টর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
রুমান হাফিজ/এসএম