স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার কারণ জানালেন ঢাবির সাবেক অধ্যাপক

Dhaka Post Desk

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

১২ মে ২০২৩, ০৯:৩৪ এএম


স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার কারণ জানালেন ঢাবির সাবেক অধ্যাপক

নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করার বিষয়ে মুখ খুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আ ম ম আরিফ বিল্লাহ।

ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত ‘পরীক্ষা কার্যক্রমে নিষিদ্ধ হয়েও থাকছেন শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে!’ শীর্ষক সংবাদ শেয়ার দিয়ে শুক্রবার (১২ মে) ফেসবুকে তিনি এসব বিষয় তুলে ধরেন।

তিনি লেখেন, ‘অপরাধের সাজা যথাসময়ে না হলে যা হয় আর কি! ২০১৭ সালে কৃত ভয়াবহ অপরাধের সাজা দিতে পাঁচটি বছর লেগেছে। অথচ এ কাজের জন্য কয়েক সপ্তাহ যথেষ্ট ছিল।‌ তারপরেও গুরুপাপে লঘু দণ্ড দেওয়া হয়েছে। আইন বিভাগে এক জুনিয়র শিক্ষক একজন ছাত্রের টেবুলেশন শীটে ১ নম্বর ঘষামাজা ধরা পড়ায় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আর ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন এবং সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সবুর ১১ জন ছাত্রের টেবুলেশন শীটে ৩২ স্থানে নম্বর কম বেশি করেছেন এবং তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এ সব অপরাধ সংঘঠন করেছেন বলে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট প্রদান করেছেন! কিন্তু তাদের চাকরি যায়নি।’

dhakapost

‘আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম থেকে বহিষ্কৃত শিক্ষকগণ বিধি মোতাবেক তাদের অধীনে এমফিল / পিএইচডি গবেষণা তত্ত্বাবধানের কাজ করতে পারেন না। কিন্তু ফারসি বিভাগে বহিষ্কৃত সব শিক্ষক: অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম খান (বর্তমানে শাস্তি মউকুফকৃত) অধ্যাপক আব্দুস সবুর খান এবং অধ্যাপক বাহাউদ্দিন তাদের অধীনে এমফিল ও পিএইচডি গবেষণা তত্ত্বাবধানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। যা প্রচলিত বিধি ও রেওয়াজ মোতাবেক আইনসম্মত না।’

আমাকে বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘এসব বিষয়ে বহুবার বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় বলেছি কিন্তু কোনো ফল হয়নি। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার ফলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়েছি। এছাড়াও অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে আমি স্বয়ং ভয়াবহ চৌর্যবৃত্তিসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ উপাচার্য বরাবর উপস্থাপন করেছি।‌ কিন্তু অদ্যাবধি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তাকে একটি হলের প্রভোস্টের দায়িত্ব দিয়ে উল্টো পুরস্কৃত করা হয়েছে। আর আমাকেই বরং বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হতে হয়েছে।’

নিজের স্বেচ্ছায় অবসরের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি হলফ করে বলতে পারি যে এর দশ ভাগের এক ভাগ অপরাধ যদি আমার দ্বারা সংঘটিত হতো তাহলে আইন অতি দ্রুত সক্রিয় হতো এবং এক সপ্তাহের মধ্যেই আমাকে চাকরিচ্যুত করা হতো। এসব নানাবিধ কারণে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেছি। আশা করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। অপরাধীরা দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে।

এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, এভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। নিজের পছন্দের লোকদের বা রাজনৈতিক বিবেচনায় আইনের শাসন অগ্রাহ্য হওয়া বা বিলম্বিত করার অর্থই হলো অনিয়মকে প্রশ্রয় দেওয়া। আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন ঘটাতে হলে রাজনৈতিক এবং দলীয় বিচার বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে সর্বস্তরে বিধি মোতাবেক আইনের উচ্চকিত করতে হবে। সবার আগে চৌর্যবৃত্তিসহ সকল একাডেমিক বিষয়ে যে সমস্ত অভিযোগ বছরের পর বছর আমলে নেওয়া হয়নি সেসব বিষয়ে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আমার কনফার্মেশনের ফাইল বিনা কারণে নানা অজুহাতে চার-পাঁচ বছর উপাচার্যের অফিসে তালাবদ্ধ রেখে আমার অধ্যাপক পদে আবেদনে বাধাপ্রদান করে যে মানসিক, সামাজিক ও আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছি তা নিঃসন্দেহে সকলের অনুমেয়। এভাবে বিভাগে এক এক করে আমার ছাত্ররা অনেকেই এ দেশে পিএইচডি করে ৮ থেকে দশ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়েই আমার আগেই অধ্যাপক হয়ে সিনিয়র হয়ে যায়। আর লন্ডন থেকে পিএইচডি করে ইংল্যান্ডে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে এবং দশটি বই, অর্ধশতাধিক গবেষণা প্রবন্ধ ও ২৮ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হতে পারিনি।

‘অবশেষে আমি দশ বছর চাকরির বয়স থাকা সত্ত্বেও গত পহেলা ডিসেম্বর ২০২১ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ত্ববর্গের উদ্দেশ্যে আমার আকুল আবেদন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করুন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ফিরে আনুন।’

এইচআর/এমএ

Link copied