১৪ লাখ টাকা তুলেও বিল পরিশোধ করেননি রাবির সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নুরের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কয়েক লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। দীর্ঘদিন বকেয়া পরিশোধ না করায় প্রতিনিয়তই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ধরনা দিচ্ছেন পাওনাদাররা। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অবিলম্বে অধ্যাপক এম তারেক নুরকে পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৯ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম তারেক নুর। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদকে তার স্থলাভিষিক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রকল্যাণসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় নানা দিবস ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তরের তত্ত্বাবধানে পালিত হয়। এসব অনুষ্ঠানের বরাদ্দ বাবদ অর্থ এই দপ্তরের কর্মকর্তাকে অগ্রিম বরাদ্দ দেওয়া হয়। দায়িত্বে থাকাকালে বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় দিবসসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যানার, ফেস্টুন, আলোকসজ্জা ও খাবারের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করেন এম তারেক নুর। কিন্তু বরাদ্দকৃত টাকা তোলা হলেও ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধ করেননি তিনি। ফলে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে প্রায় লক্ষাধিক টাকা বকেয়া পড়েছে। এখন এই টাকার জন্য প্রতিনিয়ত প্রশাসনকে চাপ দিচ্ছেন পাওনাদাররা।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ জানান, বকেয়া টাকার জন্য প্রতিনিয়ত পাওনাদাররা আসছেন। টাকা চেয়ে আবেদন করেছেন অনেকে। কিন্তু এই বিষয়ে তো আমার জানা নেই। কেননা এসব অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য আগেই বরাদ্দ দেওয়া হয়। ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তরের তত্ত্বাবধানে সেই বরাদ্দ দিয়ে অনুষ্ঠান পালিত হয়। সেই হিসেবে কোনো প্রতিষ্ঠানে বকেয়া পড়ার কথা নয়। তাই বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবিহিত করেছি।
পাওনাদার মঞ্জুরুল জানান, ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে ক্যাম্পাসজুড়ে আলোকসজ্জা বাবদ পাঁচ লাখ টাকা চুক্তি হয়। প্রথমে ১ লাখ টাকা দিলে আলোকসজ্জার কাজ শুরু হয়। কথা ছিল অনুষ্ঠান শেষে বাকি টাকা পরিশোধ করবেন। কিন্তু তিনি পরিশোধ করেছেন মাত্র ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। বাকি ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা প্রায় ২ বছর ধরে ঝুলে আছে। অথচ ঋণ করে আমি এই কাজ করেছি। সেই টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে এখন আমার ব্যবসা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নুরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে গত মে মাসে রেজিস্ট্রার দপ্তরের পাঠানো এক চিঠিতে এম তারেক নুরকে দ্রুত পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেটার একটি কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ছাত্র উপদেষ্টা থাকাবস্থায় বিভিন্ন কাজে ৬৭ দফায় অগ্রিম ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ১৫০ টাকা গ্রহণ করেছেন এম তারেক নুর। কিন্তু মাত্র ৬ লাখ ১৬ হাজার ১৮৫ টাকার সমন্বয় করেছেন। বাকি ১৩ লাখ ৮১ হাজার ৯৭০ টাকা সমন্বয় করেননি। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এই টাকার সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া দায়িত্ব পালনকালে অগ্রিম টাকা গ্রহণ করেও পাওনা পরিশোধ না করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাই অবিলম্বে এসব প্রতিষ্ঠানের পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, আমরা বিষয়টি অবগত হয়ে এই টাকা সমন্বয়ের কথা বলেছি। তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুবায়ের জিসান/আরএআর