গেস্টরুমে রাবি ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হলের মো. নজরুল ইসলাম নামে এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে গেস্ট রুমে দরজা বন্ধ করে মারধরের অভিযোগ উঠেছে দুই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের।
অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমস ও সৈয়দ আমীর আলী হল ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক উপ-সম্পাদক আল-আমিন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার (১ আগস্ট) রাতে রিডিং রুমের পাশে উচ্চস্বরে কথা বলছিলেন সৈয়দ আমীর আলী হল ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক উপ-সম্পাদক ও শেরে বাংলা হলে দীর্ঘদিন অবৈধভাবে অবস্থান করে আসা আল-আমিন। পাশে রিডিংরুম থাকায়, আমি তাকে আস্তে কথা বলতে বলি। তাকে আস্তে কথা বলতে বললাম কেন, এই নিয়ে সে আমার সঙ্গে তর্কবিতর্ক শুরু করে এবং একপর্যায়ে হুমকি দেয়। পরে সে বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন জেমসকে ডেকে নিয়ে আসে। আলতাফ হোসেন জেমস ও আল-আমিন আমাকে শের-ই-বাংলা হলের গেস্টরুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। মারধরের একপর্যায়ে আমি মাটিতে পড়ে যাই এবং আমার কান দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগের সেই নেতাদের আঘাতে আজ আমি শ্রবণ অনুভূতিহীন। ওই রাতে আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে যাই, পরদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তার দেখালে, ডাক্তার বলেন, কানের শব্দ অনুভূতি সারিয়ে তুলতে বেশ সময় লাগবে এবং দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা করাতে হবে।
মারধরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী প্রক্টর অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ জানান। তবে প্রক্টর অফিস থেকে কোনোরকম সন্তোষজনক উত্তর পাননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি চরম নিরাপত্তা সংকটে ভুগছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অসম্পূর্ণ রেখে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাবো।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমস বলেন, শের-ই বাংলা হলে আল-আমিন ও নজরুলের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। ওরা দুজনই হল ছাত্রলীগের পদধারী। তাদের মধ্যে যে ভুল বুঝাবুঝি হয়, আমি সেটা মীমাংসা করার চেষ্টা করি। পরবর্তীতে, শের-ই-বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষের উপস্থিতিতে বিষয়টি সমাধানও হয়।
মারধরের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আলফাত সায়েম জেমস বলেন, মারধরের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আমার নামে যেই অভিযোগটি দেওয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
অভিযুক্ত আল-আমিনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু ঘটনার প্রেক্ষিতে বলেন, শের-ই বাংলা হলে দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে ঝামেলা হয়েছে শুনে জেমস সেখানে গিয়ে সমাধান করে দিয়েছে। আমার জানামতে, হল প্রাধ্যক্ষও বিষয়টি সুরাহা করে দিয়েছেন। কিন্তু ঘটনার কয়েকদিন পর এভাবে অভিযোগ দেওয়ার পেছনে রাজনৈতিকভাবে কারও উসকানি থাকতে পারে বলে আমি মনে করি।
শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগী নজরুল তো আমাকে কিছুই জানায়নি। এমনকি লিখিত কোনো অভিযোগও দেয়নি। আমি ঘটনাটি শোনার পর নিজ উদ্যোগে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করি। যেই ছেলেটি ঘটনাটি ঘটিয়েছে, সে আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে লিখিত দিয়েছে। তারপরও আমি ভুক্তভোগী নজরুলকে বলেছিলাম আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য। কিন্তু সে দেখা না করে, প্রক্টরের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে শুনলাম। আমি আরেকটু খোঁজ-খবর নিয়ে ঘটনাটির সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক লিখিত অভিযোগের বিষয়ে বলেন, বিষয়টি হলের ভেতরে ঘটেছে, তাই আগে হল প্রশাসনের কাছে আবেদন করতে হবে। আমি সেই শিক্ষার্থীকে সেটি জানিয়ে দিয়েছি। আর সে নিরাপত্তাহীনতায় যদি ভোগে থাকে, তাহলে সে থানায় জিডি করুক। আমি তাকে সহযোগিতা করবো।
জুবায়ের জিসান/এএএ