জাবিতে সাংবাদিক পেটালো ছাত্রলীগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কর্মরত আফিফ আল মামুন নামে এক সাংবাদিককে পিটিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
সোমবার (২১ আগস্ট) দিবাগত রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের মাঠে তাকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক।
অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ-পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান, ছাত্রলীগ কর্মী মোহাম্মদ নাঈম হোসেন ও আমিনুর রহমান সুমন, হৃদয় রায় ও শাফায়েত হোসেন তোহা। এছাড়া উপ-কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সারোয়ার শাকিল, উপ-মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক জাহিদ হাসান, সহ-সম্পাদক রিজওয়ান রাশেদ সোয়ান, ক্রীড়া বিষয়ক উপ-সম্পাদক ফয়জুল ইসলাম নিরব, ছাত্রলীগ কর্মী সৌরভ পাল, মীর তাওহীদুল ইসলাম, আলী আক্কাস আলী, মাহীদ ও সীমান্তকে ইন্ধন দিতে দেখা যায়। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী বলে পরিচিত।
অন্যদিকে ভুক্তভোগী সাংবাদিক আসিফ আল মামুন বার্তা সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশের (ইউএনবি) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের (৪৬তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, হলের দোকানে চা খাচ্ছিলেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক আসিফ। তখন হলের গেইটে কয়েকজন শিক্ষার্থী হঠাৎ একজনকে ‘চোর’ বলে ধাওয়া করে। তারা হলের ভেতরে খেলার মাঠের দিকে এগিয়ে আসলে সাংবাদিক আসিফ সেখানে দৌড়ে যান। এ সময় ধাওয়াকারী শিক্ষার্থীরা অন্ধকারের মধ্যে আসিফকে বেধড়ক মারধর ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। তখন আসিফ নিজেকে হলের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও তাকে মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে তার শার্ট এবং জুতা ছিঁড়ে যায়।
মারধরের সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ‘সাংবাদিককে মারতে পেরেছে’ বলে আনন্দ প্রকাশ করেন বলে নিশ্চিত করেন সেখানে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের অতিথি কক্ষে ছাত্রলীগের কর্মীদের ‘গেস্টরুম’ করানো হচ্ছিল। গেস্টরুম চলাকালে ‘বাইরে থেকে কেউ ভিডিও করছে’ এমন সন্দেহে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা একজনকে ধাওয়া করে। তারা সন্দেহজনক ব্যক্তিকে ‘চোর চোর’ বলে ধাওয়া করায় হলের মাঠে হট্টগোল শুরু হয়। তখন আসিফ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে ‘সাংবাদিকরা গেস্টরুমে ভিডিও করতেই পারে’ এমন সন্দেহে তাকে মারধর করা হয়। তাকে মারধরের একটা ভিডিও এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ভিডিওতে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি সাংবাদিক হলে, গেস্টরুমে কি করেন?’
ভুক্তভোগী সাংবাদিক আসিফ আল মামুন বলেন, ‘ঘটনার সময় হলের দোকানে চা খাচ্ছিলাম। তখন হট্টগোল শুনে কৌতূহলবশত হলের মাঠে গিয়েছিলাম। কারণ হল থেকে মাঝেমধ্যে সাইকেলসহ বিভিন্ন জিনিস চুরির ঘটনা ঘটে। হঠাৎ তারা আমাকে মারধর শুরু করে। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরে তারা আরও বেশি মারধর করে। এছাড়া গেস্টরুমের আশেপাশে ছিলাম কিনা, ভিডিও করছিলাম কি না, এজন্য তারা আমাকে প্রশ্ন করতে থাকে।’ তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা।
প্রত্যক্ষদর্শী অমর্ত্য রায় বলেন, আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে হলের দোকানে চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ হট্টগোলের শব্দ শুনে আসিফ ভাই হলের মাঠে গেলে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, যতদূর শুনেছি, সাংবাদিক আসিফকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মারধর করেছে। তবে ছাত্রলীগের কেউ যদি জড়িত থাকে, তাহলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ওয়ার্ডেন ও ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. এজহারুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক আসিফের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, তা অনাকাঙ্ক্ষিত। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।
মো. আলকামা/এএএ