ছয় দশক ঐতিহ্য ধরে রেখেছে রংপুরের ‘শিঙাড়া হাউস’

সারি সারি সাজানো শিঙাড়া। এর মধ্যে তিন পিস শিঙাড়া ও বিশেষ মসলায় তৈরি সস দেওয়া প্লেটে। বিশেষ স্বাদের এ শিঙাড়া খেতে প্রতিনিয়ত ভিড় জমায় স্থানীয় ও দূরদূরান্ত থেকে আসা অনেকেই। রংপুর শহরের হাড়ি পট্টি এলাকায় ‘শিঙাড়া হাউসে’ প্রতিদিনই এ দৃশ্য দেখা যায়।
জানা যায়, ১৯৬০ সালে কানাই লাল বর্মণ নামে এক ব্যক্তি শিঙাড়া হাউসটি প্রতিষ্ঠা করেন। অন্যসব শিঙাড়ার থেকে ব্যতিক্রমী স্বাদ হওয়ায় মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পরে শিঙাড়া হাউসটির নাম। তখন থেকেই এই শিঙাড়া খেতে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। দীর্ঘদিন তিনি সুনামের সঙ্গে শিঙাড়া হাউসটি পরিচালনা করেছেন। লাল বর্মণ মারা গেলেও এই শিঙাড়া হাউসের হাল ধরেন তার পরবর্তী প্রজন্ম।
শিঙাড়া খেতে আসা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মামুন মিয়া বলেন, শিঙাড়া হাউসটির সুনামের কথা শুনে বন্ধুর সঙ্গে শিঙাড়া খেতে এসেছি। এর স্বাদ অনেক ভালো। শিঙাড়ার সঙ্গে সসটি ছিল ভিন্ন স্বাদের।
রংপুর মিঠাপুকুর এলাকার বাসিন্দা জুবাইর হাসান ছেলে-মেয়েসহ শিঙাড়া খাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, শহরে কাপড় কিনতে এসেছিলাম। শিঙাড়া হাউসটির কথা মনে পড়ায় ছেলে মেয়েকে নিয়ে এসেছি। বাড়িতেও কিছু শিঙাড়া নিয়ে যাব।
দোকানটি ছোট হওয়ায় প্রতিনিয়ত ভিড় লেগেই থাকে। আর সন্ধ্যা হলেই এ ভিড় বেড়ে যায়। এ সময় বিক্রিও বাড়ে। তখন দীর্ঘ লাইন ধরতে হয় সিট পাওয়ার জন্য। এদিকে কারিগরদেরও যেন দম ফেলার মতো সময় নেই। দক্ষ হাতে মুহূর্তেই ময়দার সঙ্গে আলু দিয়ে একটি একটি করে সিঙ্গারা তৈরি করেন।
স্থানীয়রা জানায়, স্বাধীনতার আগে এখানে বিশিষ্ট নাগরিকদের আড্ডা ছিল। কানাই লাল বর্মণ দোকানে আড্ডা আরও জমে উঠতো। দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন বিভিন্ন প্রয়োজনে রংপুরে আসলে এখানে নাস্তা করতো।
শুরুতে এক টাকায় চারটি শিঙাড়া বিক্রি করা হলেও কালের পরিবর্তনে সব কিছুর দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিঙাড়ার দামও বেড়েছে। এখন ১৫ টাকায় তিনটি শিঙাড়া পাওয়া যায়।
২০২১ সালের নভেম্বর মাসে রংপুরের এ শিঙাড়া হাউসে এসেছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। তিনি শিঙাড়া খেয়ে প্রশংসাও করেন।
শিঙাড়া হাউসের ব্যবস্থাপক সঞ্জয় বর্মণ জানান, দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে টিকে আছে শিঙাড়া হাউসটি। মানুষের চাহিদা মতো মান ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়। তাই প্রতিদিনই মানুষ ভিড় লেগে থাকে তার দোকানে।
শিপন তালুকদার/এএএ