রসের দাম ৮ টাকা বাড়িয়েও সংসার চলে না ফারুকের

দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে ভ্যানে করে আখের রস বিক্রি করছেন মোহাম্মদ ফারুক। ছোট বেলায় ভ্যানে করে বাবার সঙ্গে গ্রাম-গঞ্জে ও হাট-বাজার ঘুরে আখের রস বিক্রি করতেন। বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি এই পেশায় এসে পরিবারের হাল ধরেন।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়ে কথা হয় আখ রস বিক্রেতা মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে। ছোট্ট মেশিনের মাধ্যমে একনাগাড়ে আখের রস বের করে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছিলেন তিনি। কর্ম ব্যস্ততার মাঝে তিনি জানান, এ আখের রসই তার পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস।
মোহাম্মদ ফারুকের বাড়ি রংপুর নগরের মীরগঞ্জ এলাকায়। পাঁচ সদস্যের পরিবার তার। প্রতিদিন বাসা থেকে সকালে বের হয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন। যা আয় হয় তা দিয়েই চলে সংসার।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে তিনি রংপুর মডার্ন মোড় ও কারমাইকেল কলেজ এলাকায় আখের রস বিক্রি করতেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আখের রস বিক্রি করেন।
তিনি জানান, আগে ঠেলা গাড়িতে করে আখের রস বিক্রি করতেন। সঙ্গে আরও একজন রাখতে হতো। হাতল ঘুরিয়ে রস বের করতে শ্রম ও সময় বেশি লাগতো। ক্রেতারা তাড়াতাড়ি চাইতো। সে সময় ছোট স্যালো মেশিন বাজারে আসায় মেশিন লাগিয়ে রস মাড়াই করা শুরু করেন। দীর্ঘদিন সেটি দিয়ে কাজ করার পর কয়েক বছর আগে বৈদ্যুতিক মটর সিস্টেম শুরু হয়। এখন মটর দিয়ে মাড়াই করেন। প্রতিদিন আখের রস বিক্রি করে খরচ বাদে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা লাভ হয় তার।
তিনি আরও বলেন, আগে ২ টাকা গ্লাস প্রতি রস বিক্রি করতাম। সবকিছুরই দাম কম ছিল। ২ টাকা গ্লাস রস বিক্রি করেও সংসার ভালোভাবে চলতো। এখন সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায়, দশ টাকা গ্লাস রস বিক্রি করেও সংসার চালাতে কষ্ট হয়। মাছ মাংস তেমন কিনতে পারি না।
তাছাড়া শীত যখন শুরু হয় তখন কেউ রস খেতে চায় না। তখন খণ্ডকালীন বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়ে রোজগার করা লাগে। সে সময়টা অনেক কষ্টে দিন পার করতে হয়।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মামুন মিয়া আখের রস খেতে খেতে বলেন, মামা অনেক ভালো মানুষ। তিনি পরিষ্কার পরিছন্নভাবে আখের রস বিক্রি করেন। আখের রস খেতে ভালো লাগে। প্রতিদিন তাকে পার্ক মোড়ে দেখা যায়।
রিক্সা চালক খয়বার হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন যাবত তিনি এই এলাকায় আখের রস বিক্রি করছেন। কখনও কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে দেখিনি। তিনি আখের রস ঢেকে রাখেন। গরম পরলে প্রায় দিনই তার কাছ থেকে আখের রস নিয়ে খাই। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও পড়েন। কাউকে ঠকান না।
আখের রসে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি আছে। যারা দুর্বল কিংবা ক্লান্ত থাকেন তারা, এ রস খেলে বেশি উপকার পেয়ে থাকেন। আখের রস শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায়। জন্ডিস নিরাময়ে ভালো কাজ করে।
শিপন তালুকদার/এএএ