শাবিতে শিক্ষার্থীদের দিকে তেড়ে গেলেন দুই সহকারী প্রক্টর

ভলিবল খেলায় ‘স্লেজিং’কে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনার একপর্যায়ে মারমুখো হয়ে শিক্ষার্থীদের দিকে তেড়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে।
গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যান্ডবল গ্রাউন্ডে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত দুই সহকারী প্রক্টর পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক আব্দুল্লাহ আল ইসলাম এবং সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. আজিজুল ফজল।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্তঃবিভাগ ভলিবল প্রতিযোগিতায় পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের খেলায় উভয় পক্ষের মাঝে স্লেজিংয়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের জয়ের পরও কিছুক্ষণের মধ্যে দুইপক্ষকেই স্লেজিং করতে দেখা যায়। উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষয়টি হাতাহাতি ও ধাক্কা-ধাক্কিতে গড়ায়। এ সময় প্রক্টরিয়াল বডির ওই দুই সদস্যকে পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের দিকে মারমুখো ভঙ্গিতে এগিয়ে যেতে দেখা যায়।
খেলা শেষে ঘটনাস্থল থেকে ধারণ করা এক ভিডিওতে প্রক্টরিয়াল বডির ওই দুই সদস্যকে মারমুখো ভঙ্গিতে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। এবং সেসময় ওই দুই শিক্ষককে পেছন থেকে শিক্ষার্থীরা টেনে আটকানোর চেষ্টা করছেন বলেও লক্ষ্য করা যায়।
পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আমাদের জয়ের পর আমরা জয়োল্লাস করছিলাম। কিন্তু অপর পাশ থেকে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা আমাদের স্লেজিং শুরু করে এবং অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে। এক পর্যায়ে সহকারী প্রক্টররা শুধু পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদেরই দমাতে চেষ্টা করেন এবং মারমুখো ভঙ্গিতে একাধিক শিক্ষার্থীর দিকে এগিয়ে যান। শৃঙ্খলার দায়ে নিযুক্ত ব্যক্তিরা যদি এক পাক্ষিক আচরণ করেন, বিষয়টি কখনো কাম্য নয়।
একজন শিক্ষক বা কোন প্রক্টর শিক্ষার্থীদের দিকে তেড়ে যেতে পারেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর আব্দুল্লাহ আল ইসলাম বলেন, আমরা আসলে তাদের দুই পক্ষকে আলাদা করার জন্য সেখানে যাই। সেখানে যেন অন্য কোনো পরিস্থিতির তৈরি না হয় সেজন্য আমরা চেষ্টা করেছি।
তিনি বলেন, খেলায় এমন আচরণ করার জন্য পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের দুইজন শিক্ষার্থীকে বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে ডাকানো হয়েছে এবং সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে কোনো শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে স্লেজিংয়ে পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পলিটিক্যাল স্টাডিজ দুই বিভাগের শিক্ষার্থীরাই জড়িত ছিল কিন্তু শুধু পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ডেকে সতর্ক করা হলো কেন— এমন প্রশ্নের জবাবে পরিসংখ্যান বিভাগের ওই সহকারী প্রক্টর বলেন, তারা বেশি বাজে ব্যবহার করেছে সেজন্য তাদের ডাকানো হয়েছে। তবে তা অস্বীকার করেন পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর মো. আজিজুল ফজলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা শুধু সে সময়ে যেন কোনো ধরনের বাজে পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেজন্য তাদের দুইদিকে সরিয়ে দিচ্ছিলাম। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের দিকে তেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি বলেও দাবি করেন।
মারমুখো হয়ে তেড়ে যাবার ঘটনা না ঘটলে শিক্ষার্থীদের দিকে তেড়ে যাবার সময় শিক্ষার্থীরা কেন তাদের পেছন থেকে আটকে রাখার চেষ্টা করছিলেন— এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি কেউই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামান চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুনেছি স্লেজিংয়ের এমন ঘটনা ঘটেছে এবং সেটার সমাধানও হয়েছে তবে সহকারী প্রক্টরদের এমন আচরণের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি বিষয়টি দেখব।
জুবায়েদুল হক রবিন/এনএফ