চবিতে সাংবাদিক পেটানো ২ ছাত্রলীগ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার
মানবিক বিবেচনায় সাংবাদিককে মারধরে অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর হাসান মোহাম্মদ রোমান শুভ।
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গত ৪ অক্টোবর বোর্ড অফ রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভায় নেওয়া হয়। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের কারণ হিসেবে মানবিকতাকে প্রাধান্য দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাদের মতে, অভিযুক্ত দুই নেতার বাবা-মা এসে কান্নাকাটি করেছেন এবং মুচলেকা দিয়েছেন। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করলে তারা পরীক্ষায় বসতে পারতেন না এবং তাদের ছাত্রত্ব চলে যেত।
এর আগে, গত ১৯ জুন রাতে চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে কথা-কাটাকাটির জের ধরে চবি সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি দোস্ত মোহাম্মদ কে’কে মারধর করেন ছাত্রলীগের ১০-১২ জন নেতাকর্মী। মারধরের একপর্যায়ে ভুক্তভোগীর গায়ে গরম চা ঢেলে দেন। চায়ের কাপ দিয়ে বাড়ি দিয়ে তার মাথা ফাটিয়ে ফেলা হয়। এসময় দোস্ত মোহাম্মদ মাটিতে পড়ে গেলে পেটে উপর্যুপরি লাথি মারা হয়। এরপর ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের প্যান্টে থাকা বেল্ট খুলে মারধর করেন।
এ ঘটনায় চবি সাংবাদিকদের প্রতিবাদের মুখে ৩ দিন পর ২২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অফ রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির ভার্চুয়াল সভায় প্রধান অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতাকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
এ আদেশে বলা হয়, বহিষ্কার চলাকালীন কোনো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বা অন্য কোনো অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেও অবস্থান করতে পারবেন না। যদিও এসব আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঠিকই হলে অবস্থান করেছিলেন অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতা।
বহিষ্কৃতরা হলেন, চবি ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী খালেদ মাসুদ এবং শাখা ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী আরাফাত রায়হান। তারা চবি ছাত্রলীগের উপগ্রুপ সিএফসির কর্মী।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক দোস্ত মোহাম্মদ কে বলেন, আমার ওপরে বিনা কারণে হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় যেটুকু বিচার করা উচিত ছিল তা করেনি। কিন্তু তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য অপরাধীদেরকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করে। এখন দেখলাম, এই সামান্যতম শাস্তিটুকুও প্রত্যাহার করেছে। যা আমার সাথে রীতিমতো প্রতারণা ও অমানবিকতার শামিল। এই আদেশ প্রত্যাহারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অপরাধীদেরকে উৎসাহিত ও পুরস্কৃত করল।
সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় বহিষ্কৃতদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের ঘটনায় চবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমু বলেন, এই প্রশাসনের নির্লিপ্ততা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে অপরাধীদের কাছে জিম্মি চবি প্রশাসন। বার বার অপরাধীদের ক্ষমা করে সেটিই প্রমাণ করেছে তারা। এই প্রশাসনের কাছে সুবিচার প্রত্যাশা করাও যেন পাপ৷
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য সচিব ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, তাদের বহিষ্কারের ইতোমধ্যে চার মাস শেষ। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং অভিভাবকদের মুচলেকায় বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
রুমান/কেএ