মেয়াদ শেষ ছয় মাস আগে তবুও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শাখা ছাত্রলীগের এক বছর মেয়াদি আংশিক কমিটির বয়স দেড় বছর পার হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটিই গঠিত হয়নি। এছাড়া হল কমিটি না দিয়ে গঠন করা হয়েছে অনুষদীয় কমিটি। এ নিয়ে পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতাকর্মী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
জানা যায়, গত বছরের ২৯ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। কমিটির এক বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে আরও ছয় মাস পার হলেও দেওয়া হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। অথচ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জেলা শাখা এবং হলগুলো উপজেলা শাখার সমমর্যাদা পাবে যেখানে জেলা শাখার মেয়াদকাল এক বছর। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের অনুমোদনক্রমে ৯০ দিন সময় বৃদ্ধি করা যাবে। এই সময়ের মধ্যে সম্মেলন না হলে জেলা কমিটি বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে এমনটাই গঠনতন্ত্রে উল্লেখ আছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হলগুলো সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিয়ন্ত্রণ অনুযায়ী বিভক্ত। সভাপতি নিয়ন্ত্রণ করেন বঙ্গবন্ধু, ঈশা খাঁ, ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শহীদ নাজমুল আহসান এবং ছাত্রীদের রোজী জামাল, তাপসী রাবেয়া ও সুলতানা রাজিয়া হল। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক নিয়ন্ত্রণ করেন শহীদ শামসুল হক, শহীদ জামাল হোসেন, আশরাফুল ও শাহজালাল এবং ছাত্রীদের বেগম রোকেয়া হল ও ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল।
আরও জানা যায়, সভাপতি মতাদর্শের ছাত্রলীগ কর্মীরা সেক্রেটারির হলগুলোতে এবং সেক্রেটারির মতাদর্শের ছাত্রলীগ কর্মীরা সভাপতি নিয়ন্ত্রিত হলগুলোতে থাকতে পারেন না। বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের পরপরই গত বছরের ৩০ মে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ৫০ জনেরও বেশি আহত হন। এছাড়া চলতি বছরের গত ৫ নভেম্বর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি নিয়ন্ত্রিত দুটি হলের নেতা-কর্মীদের মাঝে আবারও মারামারির ঘটনা ঘটে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের এক ছাত্রলীগকর্মী ঢাকা পোস্টকে বলেন, হল কমিটি দেওয়ার আগেই অনুষদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে এর আগে কখনো ছাত্রলীগের অনুষদীয় কমিটি গঠন করা হয়নি। আবার অনুষদীয় ছাত্র সমিতিতে যারা আছেন তারা সবাই ছাত্রলীগ কর্মী। অনুষদীয় ছাত্র সমিতি থাকা সত্ত্বেও আলাদা করে অনুষদীয় ছাত্রলীগ কমিটি দেওয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।
আবার অনেকেই মনে করেন বাস্তবিক অর্থে অনুষদীয় ছাত্রলীগ কমিটির কোনো ভূমিকা নেই। অনুষদীয় ছাত্র সমিতির পদবঞ্চিত নেতাদের খুশি রাখতে অনুষদীয় ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কমিটিতে উত্তরবঙ্গ ও রংপুর অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন একাধিক পদবঞ্চিত কর্মীরা।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের হল কমিটিতে পদপ্রত্যাশী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের এ জেড এম বর্নী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন হওয়ায় এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা সব সময়ই বেশি। তাই যে পর্যায়ের কমিটিই হোক না কেন কমিটি জট আমাদের রাজনীতির সঠিক ধারাকে ব্যাহত করে, কর্মীদের হতাশ করে এবং নেতৃত্বে সংকটের সৃষ্টি করে। তাই জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কর্মীদের মনোবল চাঙা করতে অতি দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও হল কমিটিগুলো সম্পন্ন করা উচিত।
এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি মো. মেহেদী হাসান বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্দেশনা দিলেই আমরা কমিটি ঘোষণা দিয়ে দেব। আমাদের সবকিছু গোছানো আছে। আর ছাত্র সমিতিতে ছাত্রলীগের প্যানেল দিই আমরা। ওটা ছাত্রলীগের কমিটি না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তরবঙ্গের শিক্ষার্থী অনেক। সে কারণে রাজনীতিতেও উত্তরবঙ্গের ছেলে-মেয়ে বেশি অংশগ্রহণ করে। যারা রাজনীতির মাঠে থাকে আমরা তাদেরকেই মূল্যায়ন করি। এছাড়া আমাদের মাঝে কোনো বিভাজন নেই।
বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকবেই। তবে আমরা কেউ কারও প্রতিদ্বন্দ্বী না। এখনো যেহেতু পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়নি তাই সেখানে রংপুর ভিত্তিক রাজনীতির প্রসঙ্গটা আসার কথা না। আমরা অনুষদীয় শাখা ছাত্রলীগ কমিটি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অনুমতি নিয়েই করেছি। নির্বাচনের আগে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অনুসারী ছাত্ররা ওই সকল দলের অনুসারী শিক্ষকদের সঙ্গে মিলে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আলাদা করে অনুষদীয় কমিটি দেওয়া হয়েছে। মূলত সাংগঠনিক অবস্থা শক্তিশালী করার জন্যই এই কাজটি করা হয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি না দেওয়া বিষয়ে খন্দকার তায়েফুর রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা নিয়েছি। মূলত রাজনীতির প্রতি মন থেকে আগ্রহী এবং যোগ্য কর্মী বাছাই করার জন্যই এ বিষয়ে একটু সময় নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়েও কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে। তবে আমাদের কাছে কমিটি দেওয়ার মতো যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং হল কমিটিগুলো দেওয়ার ব্যাপারে বর্তমান কমিটির নেতাকর্মীরা যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েছেন বলেই আমরা জানি। অনুষদীয় শাখা ছাত্রলীগ কমিটি গঠন অন্যায়ের কিছুই নয়। সাংগঠনিক কার্যক্রম বিস্তৃত করার লক্ষ্যে যেকোনো সংগঠনেরই শাখা কমিটি গঠনের এখতিয়ার আছে। আমরা সকল শিক্ষার্থীদের আমাদের সংগঠনে সব সময় আমন্ত্রণ জানাই।
তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে হল ভাগাভাগি ও সংঘর্ষের বিষয়টি অবগত নন বলে জানান শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
এমজেইউ