বর্ণাঢ্য আয়োজনে ঢাবিতে ‘বিশ্ব আরবি ভাষা দিবস’ উদযাপিত

বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে আরবি বিভাগের শিক্ষার্থীদের একটি র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। বিভাগের শিক্ষকসহ সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ এবং সেন্টার ফর অ্যারাবিক টিচিং, ট্রেইনিং অ্যান্ড রিসার্চের উদ্যোগে এই দিবস পালন করা হয়। র্যালি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর.সি. মজুমদার অডিটোরিয়ামে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল কাদিরের সভাপতিত্বে এবং ড. মো. নুরে আলমের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক বলেন, দেড় হাজার বছরের আরবি সাহিত্যের ইতিহাস। কুরআন নাযিলের পূর্বের কবি ইমরুল কায়েসের কবিতা এখনও এই ভাষার জন্য প্রাসঙ্গিক। এটাই আরবি ভাষার উজ্জ্বল সাহিত্যের স্বীকৃতি। আধুনিক যুগে আমরা যেমন প্রযুক্তির নতুন আবিষ্কারের নাম হিসেবে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করি কিন্তু আরবি ভাষার লোকেরা তার জন্য নতুন পরিভাষা তৈরি করে। এটাই ভাষার স্বতন্ত্রতা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, ইসলামের ইতিহাসের মধ্যে রাসূলের যুগ থেকে খলিফাদের শাসন আমল দেখলে বুঝা যায় সে ইসলানের ইতিহাসের পাশাপাশি আরবি ভাষার সাহিত্য কত সমৃদ্ধ ছিল। আরবির চর্চা এবং বিতরণ যুগ যুগ ধরে বহু জাতিকে আলোকিত করে আসছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষা দিবস উদযাপন হচ্ছে এতে আমরা খুশি। আরও বেশি খুশি হবো যখন শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। আমি আশা করব সার্টিফিকেট পাওয়ার পর কোনো শিক্ষার্থী বেকার থাকবে না এবং ভালোভাবে এই ভাষা শিখবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেকেই বলে আরবি ইসলামের ভাষা, আরবি রাসূলের ভাষা। কিন্তু আরবি ভাষার ইতিহাস আরো অনেক প্রাচীন। এবং তখনও আরবির সাহিত্য ছিল সমৃদ্ধ। আরবি কবিতা হয়তো সেই ভাষাভাষীদের রক্তেই ছিল। তাছাড়া বর্তমানে বিশ্বের ১.৬ বিলিয়ন মানুষ প্রতিদিন আরবিতে কথা বলে বা কোনোভাবে এর চর্চা করে। জ্ঞান বিজ্ঞানের শুরুতে মুসলমানদের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি এবং আরবি ভাষার মধ্য দিয়ে এর ব্যাপ্তি লাভ করে। মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের দেশের লোকজন সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে এই ভাষায়। আশাকরি এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালে ১৮ ডিসেম্বর ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, চায়নিজ, রুশ ভাষার পাশাপাশি আরবি ভাষাও জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা লাভ করে। দিনটি স্মরণ রাখতে ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা বা ইউনেসকোর উদ্যোগে বিশ্ব আরবি ভাষা দিবস উদযাপিত হয়। এই বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো, ‘আরবি : কবিতা ও শিল্পেরভাষা।’
কেএইচ/এমএ