চলতি সপ্তাহে ভিসি পেতে পারে চট্টগ্রাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা পদত্যাগ করেছেন। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ (জাবি) বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিসি নিয়োগ হয়েছে। তবে এখনও ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ হয়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে জগন্নাথ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও অন্তত ছয়-সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ হবে।
জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক মাস পার হলেও উপাচার্য নিয়োগ না হওয়ায় অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থবিরতা বিরাজ করছে। ভিসি না থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক প্রশাসনিক ও একাডেমিক কর্মকাণ্ড।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঢাবি, জাবি, রাবিসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রো-ভিসি, রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম ও জগন্নাথের মত বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও ভিসি নিয়োগ না দেওয়ার একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতা বিরাজ করছে।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, চলতি সপ্তাহে জগন্নাথ, চট্টগ্রামসহ আরও অন্তত ছয়-সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ হবে। এবার দলীয় এর চেয়ে একাডেমেশিয়ানদের বেশি অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণ একটু দেরি হচ্ছে।
আরও পড়ুন
জগন্নাথ থেকেই ভিসি চান শিক্ষার্থীরা
২০০৫ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর হয়। প্রায় দুই দশক পরও সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ্য শিক্ষক থাকার পরও বাইরে থেকে ভিসি নিয়োগের বিরোধিতা করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এবার তারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকেই ভিসি নিয়োগ চান।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার ভিসি হওয়ার দৌড়ে এড়িয়ে আছেন জবির সিনিয়র কিছু শিক্ষক। তাদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, নীতি প্রণয়নে তিনি সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। এছাড়াও তিনি একজন দক্ষ একাডেমিশিয়ান, অভিজ্ঞ প্রশাসক, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষক এবং প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী। সার্বিক বিবেচনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার জন্য সবচেয়ে এগিয়ে আছেন তিনি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে তিনি ১৯৮৬ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ছিলেন। পরবর্তীতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবেও কাজ করেছেন। ২০০৮ সালে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এসময় তিনি বিভিন্ন একাডেমিক রুলস কমিটির সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন।
এরপর আলোচনায় রয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের সভাপতি ও সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. মোশাররফ হোসেন।
অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)- এর যুগ্ম মহাসচিব। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ও কলা অনুষদের ডিন ছিলেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন কাজে যুক্ত রইছ উদ্দিন রয়েছে তালিকায়।
অন্যদিকে জবি উপাচার্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাধিক শিক্ষকের নামও আলোচনায় রয়েছে। তারা হলেন, বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের বর্তমান আহ্বায়ক ও পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. লুৎফর রহমান; সাদা দলের বর্তমান যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান; ফিন্যান্স বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান এবং একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান।
জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, আমাকে ভিসি নিয়োগ দিলে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের আবাসন সমস্যা, ক্যাম্পাসের ক্লাস রুম সংকটের দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করবো। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার দীর্ঘ ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করবো।
এনএম/এমএসএ