দ্যুতি ছড়াচ্ছে স্বরবর্ণ ফাউন্ডেশন
সাদা অ্যাপ্রন গায়ে জড়িয়ে এবং স্টেথোস্কোপ গলায় ঝুলিয়ে মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়াই তার স্বপ্ন নয়। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে নিরন্তর কাজ করাই তার জীবনের উদ্দেশ্য।
বলছি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী হাসিবুল হাসান শান্তর কথা। অসহায় মানুষের আর্তনাদে তার ভেতরে তীব্র কম্পন সৃষ্টি হয়। দরিদ্রদের কষ্ট লাঘব করে সুন্দর জীবন গড়তে সহায়তা করা এবং তাদের স্বপ্ন পূরণের প্রয়াসে দুই বন্ধু হান্নান শেখ ও রুবায়েতুল সুজনের পরামর্শে ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন স্বরবর্ণ ফাউন্ডেশন।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভিশন-২০৫০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বর্ণের মতো দীপ্ত হয়ে, গড়বো আপন, গড়বো দেশ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে দেশজুড়ে কাজ করছে ফাউন্ডেশনটি। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাদের সেবা পৌঁছানোর জন্য একঝাঁক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল শিক্ষার্থী নিয়ে গঠিত হয়েছে ফাউন্ডেশনের সুশৃঙ্খল কমিটি।
কমিটির প্রত্যেক সদস্যই দেশ ও মানব সেবার মহান ব্রত নিয়ে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে কাজ করেন প্রতিনিয়ত। বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৯ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর। নিরক্ষরদের মাঝে শিক্ষার আলো ও বর্ণের দীপ্ততা ছড়িয়ে দিতে নিরন্তর কাজ করছে স্বরবর্ণ ফাউন্ডেশন।
বাংলাদেশে দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা অ আ ক খ বিদ্যা অর্জন করলেও অনেক ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পান না। এ ধরনের দরিদ্র পরিবারে মেয়ে সন্তান হলে বাল্যবিবাহ আর ছেলে সন্তান হলে শিশুশ্রমের দিকে ঠেলে দেন অভাবগ্রস্ত বাবা মা। আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে যা অপরাধ। কিন্তু প্রয়োজন যে কোনো আইন মানে না সেটা তাদের দেখলেই বুঝা যায়। এমন শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার পথ মসৃণ করতে স্বরবর্ণ ফাউন্ডেশন অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের এককালীন ও মাসিক বৃত্তি প্রদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে নিয়মিত। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর জন্য বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করে স্বরবর্ণ ফাউন্ডেশন। প্রথম স্থান অর্জনকারীর পড়াশোনার দায়িত্ব নেয় ফাউন্ডেশনটি
বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে তাদের রয়েছে নিজস্ব মেডিকেল টিম, যারা সংগঠনের ঊষালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসহায়, দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য সর্বদা নিবেদিত। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়মিত স্বাস্থ্য ক্যাম্প করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা প্রদান করতে ফাউন্ডেশনের মেডিকেল টিম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ব্লাড ব্যাংকের মাধ্যমে দুর্ঘটনায় আহত রোগী, মুমূর্ষু ব্যক্তি ও জরুরি অপারেশনের রোগীদের জন্য রক্ত সংগ্রহ ও সরবরাহ করে স্বরবর্ণ। স্বরবর্ণের ব্লাড ব্যাংক এখন পর্যন্ত শতাধিক রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে রক্ত সরবরাহ করে মুমূর্ষু রোগীর মুখে হাসি ফুটিয়েছে।
শিক্ষা ও চিকিৎসা ছাড়াও মানুষের অন্ন ও বস্ত্রের অভাব দূর করতে খুবই প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখে স্বরবর্ণ ফাউন্ডেশন। বর্তমানে করোনা মহামারিতে যখন দেশে নতুন প্রায় আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্রের নিষ্ঠুর ছোবলে কাতরাচ্ছে, তখন স্বরবর্ণ ফাউন্ডেশন নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের ক্ষুধা নিবারণে কাজ করে যাচ্ছে।
পবিত্র রমজান উপলক্ষে ইফতার সামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় খাদ্য উপহার স্বরূপ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দিচ্ছে স্বরবর্ণ ফাউন্ডেশন। শুধু তাই নয় কনকনে শীতে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ এবং পবিত্র ঈদে যারা টাকার অভাবে সন্তানদের নতুন পোশাক কিনে দিতে পারেন না, তাদেরকে নতুন পোশাক উপহার দিয়ে তাদের ইদের আনন্দ বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ।
মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে এবং দরিদ্র মানুষের দূর্দশা দূর করে সোনার বাংলাদেশ গড়তে ভিশন-২০৫০ নিয়ে স্বরবর্ণ ফাউন্ডেশন সবসময় নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাবে- এমনটাই বলেছেন স্বরবর্ণ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট হাসিবুল হাসান শান্ত।
এইচআর/আরএইচ