শব্দদূষণ বন্ধে ঢাবির নারী শিক্ষার্থীদের অভিনব প্রতিবাদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ ও ডাস চত্বরে উচ্চশব্দে মাইক ও বক্স বাজিয়ে সমাবেশ ও অন্য অনুষ্ঠান আয়োজন, অন্য আবাসিক হলের সামনে মাইকিং করে পণ্য বিক্রির ফলে দীর্ঘদিন ধরে ভুগতে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার ও রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা এক অভিনব প্রতিবাদের আয়োজন করেছেন। প্রতিবাদ হিসেবে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে উচ্চশব্দে সাউন্ড বক্স বাজানো শুরু করেছেন।
শনিবার (৭ নভেম্বর) রাত ৯টা থেকে তারা এ প্রতিবাদ শুরু করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা গানের তালে তালে থালা বাজিয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। অভিনব এ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে দুটি হলের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছেলেদের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা একাত্মতা পোষণ করেন।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও একজন সহকারী প্রক্টরসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক আসেন এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া শোনেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাত ১১টায়ও তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় মাইক ও সাউন্ড বক্সে উচ্চশব্দে বিভিন্ন সমাবেশ ও অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে। ফলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় পড়তে হয়। তাছাড়া বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের সামনে মাইকিং করে পণ্য বিক্রি করায় বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয় নারী শিক্ষার্থীদের। এর প্রতিকার চেয়ে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ও উপাচার্য বরাবর বিভিন্ন সময় দাবি জানালেও কোনো প্রতিকার পাননি। তাই আজ তারা এ অভিনব প্রতিবাদের আয়োজন করেন। এসময় তারা হলগুলোর সামনে জেব্রা ক্রসিং ও স্পিড ব্রেকার স্থাপনের দাবি জানান।
আরও পড়ুন
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এ সমস্যায় পতিত। আমরা ঠিকমতো পড়তে পারি না, মাথাব্যথা উঠে যায় মাইকের শব্দে কিন্তু সভা-সমাবেশ থামে না। এমনকি মাইকিং করে তারা মলম বিক্রি করে। লাগাতার এ সমস্যার কথা বিভিন্ন সময় আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি তবুও কোনো কাজ হয়নি। তাই আজ আমরা ভিসি স্যারের বাসার সামনে মাইকে উচ্চশব্দে গান বাজিয়ে স্যারকে বোঝাতে চাইছি আমাদের প্রতিদিন কেমন সমস্যায় পড়তে হয়। আমরা জানি এটা অশিক্ষার্থী সুলভ কার্যক্রম, তবুও আমরা এটা করতে বাধ্য হচ্ছি।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান সুমনা বলেন, আজ সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠে দেখি উচ্চশব্দে মাইক বাজছে। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নিই উপাচার্য স্যারের বাসার সামনে মাইক বাজিয়ে প্রশাসনকে জানান দিতে যে আমরা প্রতিদিন কেমন সমস্যায় পতিত হই। সারা বছর আমাদের মাইকের শব্দে অতিষ্ঠ হতে হয়। আমরা অনেক বার প্রশাসনকে জানালেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থী মো. মহিউদ্দিন বলেন, প্রশাসনকে ক্যাম্পাসের নারী শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে যে সমস্যার সম্মুখীন করছে সেটা অবশ্যই সমাধান করতে হবে। ক্যাম্পাসের আবাসিক হল ও একাডেমিক ভবন এলাকায় যেন কোনোভাবেই উচ্চস্বরে মাইক ও বক্স বাজানো না হয়ে সেটা শক্তভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। ক্যাম্পাসে প্রবেশের সার্ভেইলেন্স বক্স দ্রুত চালু করতে হবে এবং নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দিতে হবে। ক্যাম্পাসে বহিরাগত রিকশা প্রবেশ বন্ধ করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক রিকশা শুধু ক্যাম্পাসে চলাচলের জন্য রাখতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাকে ফার্স্ট প্রায়োরিটি দিয়ে যা করতে হয় সেটা করব। যারা সভা সমাবেশ বা অনুষ্ঠান করছেন তাদের আমরা নির্দেশনা জানিয়ে দিলেও তারা তা মানতে চান না। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই বেশি নিয়ম ভাঙছেন। তারাই আমাদের নির্দেশনা অমান্য করছেন। আমরা নোটিশ দিয়ে দেব যেন সবাই প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলে।
কেএইচ/এসএসএইচ