বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের পক্ষে ৬ দাবি ছাত্রশিবিরের

দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মেধাবী শিক্ষার্থীদের অধিকার বাড়াতে এবং সাধারণ মানুষ যেসব সুবিধা পায় সেগুলো নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছে ৬টি দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ‘মেধা ও সততায় গড়ব সবার বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে এসব দাবি জানান দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের মোট ৯৮ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মেধাবী শিক্ষার্থীকে ক্রেস্ট ও উপহার দেওয়া হয়। এ সময় নেতারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের না বলা গল্পগুলো দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন
বিশেষ প্রয়োজন সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য ৬ দফা দাবিগুলো হলো :
১. শারীরিক প্রতিবন্ধকতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য চাহিদার আলোকে ভাতা ও শিক্ষাবৃত্তি বাড়ানো এবং সহায়ক উপকরণ সহজপ্রাপ্য করতে হবে।
২. সরকারি-বেসরকারি ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালের অবকাঠামো এবং গণপরিবহনকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিবন্ধীবান্ধব করতে হবে।
৩. জাতীয় সংসদ ও নীতিনির্ধারণী জাতীয় পর্যায়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা ও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহায়ক উপকরণ, প্রশিক্ষিত শিক্ষক, বিশেষ শিক্ষা পদ্ধতি ও প্রযুক্তিনির্ভর অবকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।
৫. সরকারি-বেসরকারি খাতে প্রতিবন্ধীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিবেশ ও সমান বেতন নিশ্চিত করতে হবে।
৬. প্রতিবন্ধীদের জন্য অধিকার রক্ষায় ইউএনসিআরপিডির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ও কার্যকর মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে।
শিবির সভাপতি সরকারের কাছে এসব দাবি বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি, ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে তিনি দুটি করণীয় তুলে ধরেন। সেগুলো হলো-
১. শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের ছাত্রকল্যাণ, ছাত্র অধিকার এবং মানবাধিকার বিভাগ যৌথভাবে কাজ করবে।
২. পাশাপাশি, ছাত্রশিবিরের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগ তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় এবং অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে কার্যকর প্রচারণা চালাবে এবং তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ‘অদম্য মেধাবী'’ শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের জন্য সবসময় অনুপ্রাণিত। তবে এখনও আমরা অনেক ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে, বিভিন্ন প্রোগ্রামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতো আমাদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয় না। তাছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন ব্যবস্থা, উপযোগী ওয়াশরুম এবং অন্যান্য মৌলিক সুবিধা নিয়েও আমাদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আজকের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা সরকারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, ছাত্রশিবির এবং অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের কাছে আমাদের দাবি তুলে ধরছি। আশা করছি, আমাদের এই সমস্যা সমূহের স্থায়ী সমাধান হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আব্দুর রব বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষ। আমাদের দেশে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের প্রতি যে মনোভাব রয়েছে, তা পরিবর্তন করা প্রয়োজন। এই শিক্ষার্থীরা তাদের অদম্য মেধা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সমাজে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। তাদের সাফল্য আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। আমি আশা করি, এ ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে এবং সব প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে সমান সুযোগ প্রদান করা হবে যাতে তারা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।
কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন— মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. আব্দুর রব। বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রফেসর ড. ফখরুল ইসলাম, ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের সভাপতি ডা. নজরুল ইসলাম, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, জাহিদুর রহমান এবং ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
কেএইচ/এআইএস