নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে একইভাবে ফ্যাসিবাদের বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেছেন আলোচকরা।
শুক্রবার (২০ জুন) বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে জবি সাংবাদিক সমিতির দুই দশক পদার্পণ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় জবিসাসের সভাপতি ইমরান হুসাইনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাহতাব হোসেন লিমনের সঞ্চালনায় বিশেষ আলোচকের বক্তব্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, সাহস নিয়ে জুলাই আন্দোলনে ছাত্ররা না নামলে আমাদের আরও জীবন দিতে হত এবং সংগ্রাম করতে হত। সবার আন্তরিকতা সহকারে ফ্যাসিবাদের বিচার প্রক্রিয়া তরান্বিত হবে। যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করা আমাদের দাবির মধ্যে ছিলে। রাজনৈতিক দলের মধ্যে পক্ষ থাকবে বিপক্ষ থাকবে, সরকারের মধ্যে বিরোধী দল থাকবে। সেখানে অবশ্যই সমালোচনা থাকবে, কিন্তু তা হবে অপর পক্ষের প্রতি সম্মান শ্রদ্ধা রেখে।
তিনি আরও বলেন, গুমের একটা নতুন সংস্কৃতি ফ্যাসিস্ট হাসিনা এ দেশে তৈরি করে দিয়েছেন। আমরা শুধু নির্বাচনের জন্যই আন্দোলন সংগ্রাম করিনি। আমরা দেশকে নতুনভাবে গড়তে চাই। তারেক রহমানের ৩১ দফার বাস্তবায়ন করেই দেশকে এগিয়ে নেব। আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচার চাই। বিচার সংস্কার চলছে। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের ঐক্য আরও সুদূর করতে হবে। ফ্যাসিবাদ যেভাবে আমাদের দেশকে অসম্মানিত করেছে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একটি নির্বাচিত সরকার তৈরি হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামির সেক্রেটারি ড. মু. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা শুধু কোনো ফ্যাসিবাদী সরকারকে পতন ঘটায়নি, একটি পার্শ্ববর্তী দেশের চোখ রাঙ্গানি ও দাদাগিরির পতন ঘটিয়েছি। জুলাইয়ে ছাত্ররাও স্লোগান দিয়েছিল, আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ। তাই আমাদের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। আমি শফিকুল ইসলাম মাসুদও যদি ফ্যাসিবাদের পক্ষে কোনো কথা বলি, তাহলে আপনারা সেটার প্রতিবাদ করবেন। আগামী দিনেও কেউ ফ্যাসিবাদকে লালন করতে চাইলে, আপনারা তখনই কলম যোদ্ধা হিসেবে ভূমিকা রাখবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন বলেন, ৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে আহ্বান করবো, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে যেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানকে মূল্যায়ন করা হয়। একটি দেশের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অপরিহার্য। ভবিষ্যতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন থাকবে, সেই প্রত্যাশা রাখি। সম্প্রতি আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে নিয়ে করা কার্টুন নিজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার দিয়েছেন। এই ঘটনা ফ্যাসিবাদ পরবর্তী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে একটি নজির হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি (বিএফইউজে) কাদের গণি চৌধুরী বলেন, অমর্ত্য সেনের মতে- গণমাধ্যমের তথ্য সুপ্ত হয়ে যাওয়ার ফলে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে স্বৈরাচারী পথে ধাবিত করে। তথ্যই শক্তি, আর গণমাধ্যম সেই শক্তির আধার। সত্য মিথ্যার সংমিশ্রণে সাংবাদিকতা হয় না। শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট থেকে স্বৈরাচার বানানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিল এই গণমাধ্যম। এ দেশের সন্তানকে একের পর এক গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তবু বলেছে আরও লাশ চাই, আরও লাশ চাই। যারা এত নৃশংস নিষ্ঠুর, তাদের বিষয়ে কোনো আপোষ চলবে না। এদের কোনো রাজনৈতিক অধিকার নেই।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, মূল ধারার গণমাধ্যম এ দেশের ছাত্র জনতার আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। যারা মোবাইল জার্নালিজম করেন, মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজমের কারণে এতটুকু পৌঁছে গেছে। এ দেশের মানুষের মুক্তি আসবে বলেই ছাত্রজনতা আন্দোলনে জীবন দিয়েছিলেন। আমি শিক্ষকদের আহ্বান জানাবো, তারা যেন শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা ও আদর্শের শিক্ষাটি দেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, অতীতে সময়ে গণমাধ্যম তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে নাই। ফলে বর্তমানে নতুন বাংলাদেশ গড়তে দায়বদ্ধতা রয়েছে গণমাধ্যমের। অতীতে ‘আপার শাড়ি সুন্দর’ বলে তোষামোদ করেছে। বাংলাদেশে সব সংস্কারের কথা বলা হয়, কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সংস্কারের কথা কেউ বলে না। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির দায়বদ্ধতা হচ্ছে, সে গণমাধ্যমকে স্বাধীনতা দেবে। গণমাধ্যমকে বলতে হবে, আমাদের তোষামোদ করতে হবে না।
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, অতীতের আন্দোলন শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছে। গত জুলাই আন্দোলনে সব পর্যায়ের মানুষ অংশগ্রহণ করেছ। বাংলাদেশে একটা চক্র রয়েছে, যারা শুধু বলতে চায়, ১৭ বছরে রাজনীতিবিদরা কি করেছে? যখন আন্দোলন বন্ধ করতে হয়েছিল, তখন আইনজীবীরা মাঠে নেমেছিল। ব্যারিস্টার খোকন বলেছিলেন, আগে আমকে গ্রেপ্তার করতে হবে। রাজনীতিক ব্যক্তিদের চেষ্টা ছিল। যারা বলে বিগত ১৭ বছর রাজনীতিবিদরা ব্যর্থ হয়েছে, আসলে তারা ব্যর্থ হয়নি। তারা চেষ্টা করেছেন।
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির (বিডিপি) সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক নাঈম বলেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে হবে রাজনৈতিক দলের সংস্কৃতির পরিবর্তনের মাধ্যমে। অন্যথায় আমাদের কাঙ্ক্ষিত নতুন বন্দোবস্ত অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। প্রত্যেক আন্দোলন সংগ্রামের পরে সবাই বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো, যাতে আমাদের আবার পূর্বের অবস্থায় যাতে ফিরে না যেতে হয়। কিন্তু পরবর্তীতে কেউ নিজের এবং তার দলের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আনে না।
আরও পড়ুন
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিন, শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন। এর আগে এদিন সকালে জবি সাংবাদিক সমিতির দুই দশক উপলক্ষে আনন্দ র্যালি ও ফল উৎসব করেন নেতারা।
এমএল/এমএন