জবির দুই শিক্ষক ও ছাত্র সংসদের নেতাদের ওপর ছাত্রদলের হামলা

ছাত্রলীগ নেতাকে আটকের ঘটনা ঘিরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) নেতাদের ওপর হামলা চালিয়েছে শাখা ছাত্রদলের নেতকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সাজিদ ভবনের নিচে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রফিক বিন সাদেক রেসাদের ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা দুপুরের দিকে বিভাগে আটক রাখে। পরে তাকে মারধর শুরু করলে বিভাগের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা ড. এ কে এম রিফাত হাসান এবং সহকারী প্রক্টর শফিকুল ইসলাম এগিয়ে এলে তাদের গালিগালাজ ও হামলা করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় বাগছাসের নেতাকর্মীরা এলে তাদের ওপরও হামলা করেন তারা। বর্তমানে আহতদের কয়েকজন ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুকের ওপর ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান ও শামসুল আরেফিনের নেতৃত্বে হামলা করা হয়। আমি সামনে গিয়ে তাদের বলি, ‘ভাই, ফারুক জুলাই আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী। ১৯ জুলাই আন্দোলনের সময় তার মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছিল। তাকে ছাত্রলীগ হিসেবে ট্যাগ দিয়ে এভাবে মারধর করা ঠিক নয়।’ কিন্তু আমার অনুরোধ সত্ত্বেও তারা তাকে মারধর করে। জবি ছাত্রদলের ১২ থেকে ১৩ জন যদি ব্যানার নিয়ে দাঁড়ায় তবে ফারুক তাদের একজন ছিলেন। ২৮ অক্টোবর ২০১৩ সালে পল্টনে গুলি খেয়েছিলেন। সেই আমাকেও ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে লাথি ও ঘুসি মারা হয়েছে। জবি ছাত্রদলের নামে অছাত্ররা সন্ত্রাস কায়েম করছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমাদের স্যাররা যখন আমাদের রক্ষার্থে এসেছে তখন তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এগুলো পাওয়া যাবে।

হামলার শিকার হওয়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ ও জবি শাখার গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মুখ্য সংগঠক ফেরদৌস শেখ বলেন, আমাদের এক জুলাই যোদ্ধাকে ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে জবি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সামসুল আরেফিন ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে প্রথমে হামলা চালায়। পরে তাকে শিক্ষকদের সহায়তায় বাঁচাতে আসলে আমাদের ওপর হামলা করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কে এ এস রিফাত হাসান ও একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম স্যারসহ বাগছাস জবি শাখার আহ্বায়কের ওপর হামলা চালায়। আমি এই হামলার বিচার চাই সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, আজকে আমরা জানতে পারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা প্রবেশ করেছে। এরা বিভিন্ন সময় ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছে ক্যাম্পাসে ঢুকবে এবং অরাজকতার সৃষ্টি করবে। এর আগে সাজিদ নামে একটি ছেলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিল এবং ক্যাম্পাসে এসেছিল তারই অংশ হিসেবে তারা বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসে এসে সংগঠিত হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের অরাজকতার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। আজকে যারা এদের মাধ্যমে আহত হয়েছে তারা এসে যখন এদের ধরতে যায় তারা উল্টা তখন ছাত্রদলের বিরুদ্ধে মব সৃষ্টি করে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, ঘটনা শোনা মাত্রই আমরা পুরো প্রক্টরিয়াল বডি সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি। এ মুহূর্তে পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিষয়টি সুরাহা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র অধ্যাপকের সিদ্ধান্ত সবার মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।
এ বিষয়ে হামলায় আহত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বললে তারা পরে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
এমএল/এমএ