টেবিল চাপড়ে উপাচার্যকে ধমকালেন ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি গণেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানকে প্রকাশ্যে ধমক দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সভাপতি গণেশ চন্দ্র সাহস।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ডাকসু নির্বাচন সংক্রান্ত একটি মিটিং চলাকালে সেখানে প্রবেশ করেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সেখানে ছাত্রদল নানা বিষয়ে অভিযোগ দেওয়ার প্রাক্কালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল সভাপতি গণেশ চন্দ্র সাহস। উচ্চবাচ্য ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন।
এমন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের উপস্থিতিতেই ক্ষুব্ধ ভঙ্গিতে কথা বলছেন গণেশ চন্দ্র রায় সাহস। তিনি নানা বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে উপাচার্যের প্রতি কঠিন ভাষায় সমালোচনা করেন। এ সময় উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষার্থীও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে।
গণেশ চন্দ্র সাহস বলেন, ‘আজ নারী শিক্ষার্থীরা বাইরে থেকে আসল, বাসগুলো কম আসল; আপনি বুঝেন না এটা ডাকসু নির্বাচন?’ এ সময় টেবিল চাপড়ে ভিসিকে ধমক দেন ছাত্রদল সভাপতি। পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির তাকে নিবৃত করেন। অন্যদিকে গণেশকে উদ্দেশ্য করে উপাচার্য বলেন, ‘আপনি চুপচাপ বসে যান।’
এরপরও ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের সামনেই বর্তমান প্রশাসনকে ‘জামায়াতি প্রশাসন’ আখ্যা দিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করলে সভাকক্ষে হট্টগোল ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
ভিসির কাছে ছাত্রদল অভিযোগ করে, ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসের আশপাশে বহিরাগত জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী জড়ো করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের নেতাকর্মীরা। উপাচার্য ‘ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে’ জানালেও তারা তা মানতে রাজি হননি।
এ ঘটনার সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির বিএনপিপন্থি শিক্ষক ও পদার্থবিজ্ঞান সাবেক অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানসহ বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গণেশের ওই ভিডিও নিয়ে ইতোমধ্যে ফেসবুকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ এটিকে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ এটিকে শিষ্টাচারবহির্ভূত ও নিন্দনীয় ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সারজিস লেখেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য স্যারের সঙ্গে আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি ‘গণেশ চন্দ্র রায় সাহস’ যেই ব্যবহার করেছে সেটা রীতিমতো বেয়াদবি। যে জানে না একজন শিক্ষকের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয় তার ছাত্রনেতা হওয়া তো দূরের কথা, ছাত্র হওয়ারও ন্যূনতম যোগ্যতা নাই। কোনো বিষয়ে যৌক্তিক অবজেকশন থাকলে সেটার সমাধান প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হবে। ইভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে কয়েকটি মোড়ে জামাত-শিবিরের কর্মীদের অবস্থানও আমি উস্কানিমূলক মনে করি। পরবর্তীতে যেটা বিএনপি-ছাত্রদলও করেছে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘কিন্তু যে মিডিয়ার সামনে, সারা দেশের সামনে একজন শিক্ষককে ধমকাতে পারে, তুই তুকারির স্বরে তার সামনে টেবিল চাপড়াতে পারে তার মত ছাত্রনেতা আমাদের জন্য লজ্জার। ধিক্কার জানাই।’
জাহাঙ্গীর নামে একজন লিখেছেন, ‘ওদের মত নেতাদের জন্যই আজকে এই অবস্থা’। আরশাদ চৌধুরী নামে একজন লিখেছেন, ‘একজন ভিসির সাথে কীভাবে কথা বলতে হয়, এখনো শিক্ষা নেয়নি তারা।
জেইউ/বিআরইউ