দোকানে তালা দেওয়ায় ঢাবি কর্মকর্তাকে ধমকালেন সাবেক ছাত্রদল নেত্রী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে পচা মুরগির মাংস দিয়ে হালিম রান্না করে বিক্রির দায়ে একটি দোকানে তালা দিয়েছে প্রশাসন। এ ঘটনার পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি অফিসারকে হুমকি ও হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব পরিচালকের দপ্তরের উপ-পরিচালক নাজমুন নাহার নয়ন ও দোকান মালিক সাবেক ছাত্রদল নেত্রী তানজিন চৌধুরী লিলির বিরুদ্ধে।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এই ঘটনা ঘটে।
তানজিন চৌধুরী লিলি ঢাবির শামসুন নাহার হল শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে ময়মনসিংহ জেলা উত্তর মহিলা দলের সভাপতি।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হল ছাত্র সংসদের ভিপি মাহবুব তালুকদারসহ কয়েকজন ওই দোকানে হালিম খেতে গেলে হালিমে ব্যবহৃত মাংস পচা ও অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বুঝতে পারেন। এ সময় তারা ওই হালিম দোকানের ম্যানেজারকে খেতে বলেন। দোকান ম্যানেজারও সেটি মুখে নিয়ে ফেলে দেন এবং স্বীকার করেন হালিমে ব্যবহৃত মাংসে সমস্যা আছে। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন— আমরা বুঝতে পারিনি এ মাংসে সমস্যা আছে।
পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা দোকান ম্যানেজারকে সঙ্গে নিয়ে প্রক্টর অফিসে আসেন এবং অভিযোগ দেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদের নির্দেশে সিকিউরিটি অফিসার প্রক্টর অফিসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ঘটনা অবহিত হন এবং দোকানের ম্যানেজারের কাছে ঘটনার সত্যতা জানতে চান। এ সময় দোকানের ম্যানেজার হালিমে ব্যবহৃত মাংস নষ্ট ছিল বলে স্বীকার করেন।
তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি অফিসার বলেন, যেহেতু আপনি অপরাধ স্বীকার করেছেন, সেহেতু প্রক্টর স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী আপনার দোকানটিতে সাময়িক সময়ের জন্য তালা দেওয়া হবে এবং হালিমের নমুনা ল্যাবরেটরি টেস্টের জন্য পাঠানো হবে। এরপর প্রক্টরিয়াল টিমসহ সিকিউরিটি অফিসার দোকানটিতে তালা দেন। কিন্তু দোকানে প্রশাসনের উপস্থিতির আগেই দোকানের কর্মচারীরা হালিমের পাতিল ফাঁকা করে ফেলেন। যার কারণে কোনো নমুনা সংগ্রহ করা যায়নি। এ সময় দোকানটিতে অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় থাকা অন্যান্য মাংসের নমুনা সংগ্রহ করে প্রক্টরিয়াল টিম। যেখানে দেখা যায়, ডিপ ফ্রিজে দোকানটি মাংস সংরক্ষণ করছে না।
এ ঘটনার পরদিন বুধবার দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের এস্টেট অফিসে দলবল নিয়ে গিয়ে সিকিউরিটি অফিসারকে হুমকি দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব পরিচালকের দপ্তরের উপ-হিসাব পরিচালক নাজমুন নাহার নয়ন এবং দোকানের বরাদ্দপ্রাপ্ত মালিক সাবেক ছাত্রদল নেত্রী লিলি। সেখানে ধমকের সুরে তিনি বলেন, সিকিউরিটি অফিসার মনির কে? দোকানে তালা দেওয়া হয়েছে কেন? দোকানের কর্মচারীদের বকাঝকা করা হয়েছে কেন? কবে চাকরিতে জয়েন করেছো? আমাদের চেনো না?
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ম্যানেজার ফাতেমা বিনতে মোস্তফা উপ-হিসাব পরিচালককে বলেন, আপনি আমার সামনে আমার অফিসারের সঙ্গে এভাবে কথা বলছেন কেন? আপনার কোনো ইস্যু থাকলে সেটি আমার রুমে গিয়ে আমাকে বলেন। এভাবে আপনি হুমকি-ধমকি দিতে পারেন না।
তখন নয়ন ও লিলি এস্টেট ম্যানেজারকে বলেন, আপনার অফিসার জানে না দোকানটা কার। কেন সে দোকানে তালা দিয়েছে?
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় তারা বারবার উত্তেজিত আচরণ করতে থাকেন এবং এস্টেট ম্যানেজারের কাছেও উত্তেজিত হয়ে দোকানে তালা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চান ও ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন।
এদিকে দোকানে তালা দেওয়া হলেও বুধবার দুপুরে দোকানটির একটি শাটার খুলে গোপনে পার্সেলে খাবার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ম্যানেজার ফাতেমা বিনতে মোস্তফা বলেন, রাজনৈতিক পেশি শক্তি ব্যবহার করে এক দপ্তরের কর্মকর্তা অপর দপ্তরের কর্মকর্তাকে গালিগালাজ কীভাবে করল, সেটা আমার বুঝে আসে না। দোকানি ছাত্রদের পচা মাংস খাওয়াচ্ছে, সেজন্য আমার অফিসার ব্যবস্থা নিয়েছে। এখন তদন্ত হবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে কার বান্ধবির দোকান, সেটা দেখা হবে না। আমরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
তবে সিকিউরিটি অফিসারকে তার দপ্তরে গিয়ে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। উপ-হিসাব পরিচালক নাজমুন নাহার নয়ন বলেন, কোনো সিনক্রিয়েট হয়নি।
দোকান মালিক লিলি বলেন, কে কি জিনিস, সেটা আমি চিনি না। তবে গিয়েছিলাম সেখানে। কোনো ঝামেলা হয়নি।
জানতে চাইলে সিকিউরিটি অফিসার মুনির হোসেন বলেন, দোকানটিতে নষ্ট মাংস দিয়ে হালিম রান্না করে বিক্রি করা হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। যেটি দোকানটির ম্যানেজার আমাদের কাছেও স্বীকার করেছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্টর স্যারের নির্দেশে দোকানটিতে তালা দেওয়া হয়।
এসএআর/এমজে