রাকসু নির্বাচন : ভোটের আগের রাতে গানের উৎসবে মেতেছে ভোটাররা

৩৫ বছর পর আবারো ফিরছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই ভোট উৎসবের আগের রাতে পুরো ক্যাম্পাস যেন রূপ নিয়েছে এক আনন্দমেলায়। রাজনৈতিক উত্তাপের পাশাপাশি আবাসিক হলগুলোতে চলছে সুরের উচ্ছ্বাস, গান-বাজনার এক ভিন্ন আয়োজন।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার চেনা নীরবতা ভেঙে গেছে গানের সুরে। কেউ হাতে তুলে নিয়েছেন গিটার, কেউ গাইছেন পুরোনো প্রিয় গান। রাত যত গভীর হচ্ছে, সুরের তালে তালে জমে উঠছে হাসি-উচ্ছ্বাস আর আনন্দ আড্ডা।
গান আর গল্পে ভরা এই রাত যেন শিক্ষার্থীদের মনে জাগিয়ে তুলেছে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ। কেউ কেউ নির্বাচনের কথা বলছেন সুরের ফাঁকে, আবার কেউ শুধু উপভোগ করছেন মুহূর্তের আনন্দ।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়ের আহসান হাসতে হাসতে বলেন, আগামীকাল ভোট, আজ আর পড়াশোনার কথা নয়। এটাই আমাদের উৎসবের রাত।
আরও পড়ুন
অন্য এক শিক্ষার্থী সাদেক রহমান নাট্যকলা বিভাগ (২০১৯-২০) গিটার হাতে যোগ করলেন, রাজনীতি তো আগামীকাল হবে, আজ গানেই মেতে থাকি। জয়-পরাজয় তো পরে দেখা যাবে। আজ উৎসবে মেতে থাকতে চাই।

সাদেক রহমানের বন্ধু অমিত তঞ্চগ্যা (চারুকলা বিভাগ ২০২০-২১) সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী। তিনিও ভোটের আগের রাতে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে দেখছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, হলে বেশ কিছু ভোটার আছে। তাদেরকে একটি দলের ছাত্র সংগঠনের প্যানেল খাবার দিচ্ছে। অনেক টাকা ইনভেস্ট করছে। যেটা আচরণ বিধি লঙ্ঘন। কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
ঘুরে দেখা গেছে, আবাসিক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গানের আসরে তাদের গলায় কখনো ভেসে আসছে ব্যান্ড সংগীত, কখনো জনপ্রিয় আধুনিক গান। কেউ গাইছেন, আর অন্যরা সেই সুরে তাল মিলিয়ে গলা মেলাচ্ছেন।
নির্বাচনের আগের রাত এক অন্যরকম আবহ বিরাজ করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্যাম্পাস জুড়ে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে—টুকিটাকি চত্বর থেকে শুরু করে পরিবহন চত্বর—শিক্ষার্থীদের সুর ও কণ্ঠে ভরপুর হয়ে উঠেছে।
যেখানে এক পাশে ভোটের প্রচারণা শেষ মুহূর্তে টানটান উত্তেজনা, অন্য পাশে শিক্ষার্থীদের গান আর হাসির সুরে ফুটে উঠছে এক আনন্দঘন পরিবেশ। ৩৫ বছর পরের এই নির্বাচনের আগের রাতটি তাই কেবল ভোটের নয়, স্মরণীয় হয়ে থাকছে রাবির সাংস্কৃতিক উচ্ছ্বাসের রাত হিসেবেও।
প্রসঙ্গত, এবারের রাকসু নির্বাচনে ২৩টি পদে লড়ছেন ২৪৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে ১৮ জন, জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস) পদে ১৩ জন এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল সেক্রেটারি (এজিএস) পদে ১৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ছাত্রদল ও শিবির সমর্থিতসহ এখন পর্যন্ত ১২টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে।
রাকসুতে মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ জন এবং পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন। রাকসু ও সিনেট নির্বাচনে মোট ৩০৬ জন এবং হল সংসদ নির্বাচনে ৬০০ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। আগামীকাল ১৬ অক্টোবর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গণনা শেষে সেদিনই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
এএইচআর/বিআরইউ