নির্বাচনের এক মাস পরেও জাকসু ভবন বুঝে পাননি প্রতিনিধিরা

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ১১ সেপ্টেম্বর। নির্বাচনের ১ মাস পেরিয়ে গেলেও জাকসু ভবন বুঝে পাননি নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। ফলে নির্দিষ্ট জায়গার অভাবে সভা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। বিভিন্ন স্থানে সভা করছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ সেপ্টেম্বর জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন আব্দুর রশিদ জিতু ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন মাজহারুল ইসলাম। জাকসুতে মোট ২৭টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের ভোটে ২৫ জন নির্বাচিত হন। এই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সভা ও অন্যান্য কাজের জন্য একটি ভবন রয়েছে যেটি জাকসু ভবন নামে পরিচিত। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে পুরোনো ভবনটি সংস্কারের কাজ শুরু করে প্রশাসন। তবে নির্বাচনের এক মাস পার হয়ে গেলেও জাকসু ভবন সংস্কার শেষ হয়নি। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন জাকসুর প্রতিনিধিরা।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের পাশে অবস্থিত জাকসু ভবনের সামনের রাস্তার ঢালাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে। ভবনে লাইট, ফ্যানের সংযোগ দেওয়া হলেও শুধুমাত্র ফার্নিচার ছাড়া অন্য কিছু নেই। এছাড়াও কম্পিউটার, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ অন্যান্য সুবিধা বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রতিনিধিরা।

এ বিষয়ে জাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, আমরা দেখেছি জাকসু ভবন আমাদের সঠিকভাবে বুঝিয়ে না দেওয়ার কারণে প্রতিনিধিরা সঠিকভাবে তাদের কাজ বাস্তবায়ন করতে পারছেন না। আমাদের সম্মানহানি হচ্ছে। কারণ আমরা কোনোদিন নতুন কলা ভবনে, কোনোদিন প্রক্টর অফিসে কিংবা রেজিস্ট্রারের কাউন্সিল রুমে মিটিং করছি। এর কারণে স্বতস্ফূর্তভাবে আমাদের কাজগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এজন্য আমরা জাকসু সভাপতি এবং ট্রেজারার মহোদয়কে বলেছি যেন অতিদ্রুত আমাদের এই সমস্যা সমাধান করা হয়।
জাকসু ভবনের কাজ সম্পন্ন করতে প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে মনে করেন জাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রশাসনের সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকলেও প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে এটি আরও দ্রুত সমাধান করা যেত। ফার্নিচার বরাদ্দ পেলেও সম্পূর্ণভাবে ফাংশনাল হওয়ার জন্য আরও কিছু প্রস্তুতি লাগবে, যার জন্য আরও সময় লাগবে। প্রশাসনকে আরও সদিচ্ছা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ শুধুমাত্র জাকসু ভবনের জন্য যদি এত গড়িমসি হয়, তাহলে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে তাদের মানসিকতা কেমন হবে- সেটা বুঝা যায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সোহেল আহমেদ বলেন, দুঃখ প্রকাশ করে বলছি- নির্বাচন হবে কী হবে না এটা নিয়ে মতবিরোধ ছিল। সর্বশেষ তফসিলের সময় নির্বাচন কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্বাচন শুরুর আগমুহূর্তে আমরা কাজ শুরু করছিলাম। কিন্তু জাকসু ভবন প্রায় ৫০ বছরের পুরোনো। বিল্ডিংটি রেনোভেট করা হচ্ছে। রাস্তার কাজ পরে শুরু হয়েছিলো। সেখানেই মেডিকেল সেন্টার থাকায় কাজ করতে টেকসইভাবে প্ল্যান করতে একটু সময় লেগেছে। সিভিল পার্ট কমপ্লিট করে ফার্নিচারের অর্ডার জরুরি ভিত্তিতে করেও ফার্নিচারের ওয়ার্ক ওয়ার্ডার ১৩ সেপ্টেম্বর আসে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। আমরা কোনো রকমের ফান্ড এখনো পাইনি। এছাড়া প্রতিকূল আবহাওয়া বিশেষ করে প্রায় দুই সপ্তাহ যাবত বিরতিহীন বৃষ্টিতে রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার কাজকে বাধাগ্রস্ত করেছে। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ওয়ার্ক সুপারভাইজার, নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এবং নির্মাণ শ্রমিকরা নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা দিয়ে কাজটি শেষ করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। আমরা যদি ফান্ড পেয়ে যেতাম আমাদের কাজের গতি আরও বেড়ে যেত। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। খুব শিগগিরই আমরা কাজ শেষ করে ভবন হস্তান্তর করবো।
আরএআর