‘আগেরটায় যখন ১০ পেয়েছো পরেরটাও তাই পাবা’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর) বিভাগের শিক্ষক ফজলুল হালিম রানার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রতি অন্যায় আচরণ, রাজনৈতিক ট্যাগ লাগানো, খাতা অবমূল্যায়ন এবং মানসিক হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সজিবুর রহমান।
সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসানের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এ সময় তার সঙ্গে আরও কয়েকজন সহপাঠী উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট শিক্ষক প্রায়ই টিউটোরিয়াল বা অ্যাসাইনমেন্টের খাতা না দেখে নিজের ইচ্ছামতো কম নম্বর দেন। এমনকি প্রথম টিউটোরিয়ালে কম নম্বর পাওয়ার কারণ দেখিয়ে পরের টিউটোরিয়াল খাতাও না দেখে একই নম্বর দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, একই ধরনের উত্তরে কেউ পূর্ণ নম্বর পেলেও কেউ খুব কম নম্বর পেয়েছেন, যা মূল্যায়নে পক্ষপাতের ইঙ্গিত দেয়। কয়েকজন শিক্ষার্থীর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অভিযোগপত্রে যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে- একটি সামান্য ভুলের জন্য তিনি টিউটোরিয়ালে ২০-এর মধ্যে ১০ দিয়েছেন। কিন্তু একই ধরনের ছোট ভুল অন্য শিক্ষার্থীর খাতায় থাকলেও তা ভুল হিসেবে ধরেননি। এটি কোনোভাবে মানা গেলেও, প্রথম টিউটোরিয়ালে ১০ পাওয়ায় এরপর তিনি খাতা না দেখেই পরের টিউটোরিয়ালেও ২০-এর মধ্যে ১০ দেন। শিক্ষার্থী এ বিষয়ে শিক্ষককে জিজ্ঞেস কর বলেন, স্যার, এই খাতায় তো কোনো ভুল নেই, একটু দেখে বলবেন কোথায় ভুল করেছি?
জবাবে শিক্ষক বলেন, কি লিখছো বোঝা যায়। আগেরটায় যখন ১০ পেয়েছো, পরেরটাতেও তাই পাবা। অর্থাৎ আগের টিউটোরিয়ালের নম্বরের ভিত্তিতেই পরের টিউটোরিয়ালের নম্বর দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এটিকে অত্যন্ত অবিচারপূর্ণ মূল্যায়ন পদ্ধতি বলে উল্লেখ করেছেন। অভিযোগপত্রে আরও কয়েকজনের ব্যক্তিগত সাক্ষ্যও দেওয়া হয়েছে।
৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হযরত আলী অভিযোগ করেন, ভর্তি কার্যক্রমের সময় তার মাদ্রাসা পটভূমি দেখে শিক্ষক তাকে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে অপমান করেছেন এবং তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন।
আরেক শিক্ষার্থী তাকিউদ্দীন বলেন, শিক্ষক তাকে আইএস সংশ্লিষ্ট বলে সন্দেহ করেছেন এবং বিভাগে টিকতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিয়েছেন।
জাহাঙ্গীর আলম জানান, দাড়ি রাখায় তাকে শিবির বলা হয়েছে এবং দুই টিউটোরিয়ালেই একই নম্বর দেওয়া হয়েছে, যদিও তিনি প্রশ্ন অনুযায়ীই উত্তর লিখেছিলেন।
৫০তম ব্যাচের তুরান নামে একজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, শিক্ষক তার ভর্তি যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং পারিবারিক পরিচয় নিয়েও কটূক্তি করেন।
৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মারুফ আল ফাহিম জানান, ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে শিক্ষক তার ফলাফল ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছেন। এমনকি তাকে বহিষ্কারের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল।
আন নাজমুস সাকিব অভিযোগ করেন, টিউটোরিয়াল খাতা না পড়েই তাকে কম নম্বর দেওয়া হয় এবং তার মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ড হওয়ায় তিনি বৈষম্যের শিকার হন।
সিআর সালমান শাহ জানান, শিক্ষক নির্দেশ দিয়েছিলেন যে কোনো শিক্ষার্থী তার রুমে যেতে পারবে না কিংবা ফোনও করা যাবে না। নিয়মিত ক্লাস না নেওয়ার বিষয়ে জানাতে গেলে ক্লাসে তাকে অপমানও করা হয়।
এসময় অভিযোগকারী সজিবুর রহমানের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ জানাতে উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি তুলে ধরেছেন। দাবিগুলো হলো- সহযোগী অধ্যাপক ফজলুল হালিম রানা যেন চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন না করেন, টিউটোরিয়ালসহ সব খাতা স্বাধীনভাবে পুনর্মূল্যায়ন করা, নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক হয়রানি রোধে স্থায়ী নীতিমালা গ্রহণ এবং অভিযুক্ত শিক্ষকের বিষয়ে বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফজলুল হালিম রানা গণমাধ্যমকে বলেন, আমার ১৮ বছরের শিক্ষকতা জীবনে কোনো শিক্ষার্থীর পোশাক বা পরিচ্ছদ নিয়ে কখনও এমন মন্তব্য করিনি। বরং আমি সব শিক্ষার্থীকে স্বকীয়তা বজায় রাখতে উৎসাহ দিই। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। চতুর্থ বর্ষের একটি কোর্সের ক্লাস নিই। ওই কোর্সের এখনো ফাইনাল নম্বর দিইনি। তাই এ ধরনের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।
এআরবি