রাবির আরবি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আরবি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলেছেন কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ অভিযোগ করেন। এর আগে তারা উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপিও জমা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, আরবি বিভাগে নিয়োগ-সংক্রান্ত একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগের সুনাম, একাডেমিক পরিবেশ এবং ন্যায়ভিত্তিক নিয়োগনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। কিছু প্রার্থীকে আঞ্চলিকতা, ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা, রাজনৈতিক পরিচয়, অর্থনৈতিক লেনদেন, এমনকি অনৈতিক আচরণ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনিক সহানুভূতির সুযোগ নিয়ে বিভাগে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
বিভিন্ন সূত্র ও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে, প্রভাবশালী ব্যক্তি, পূর্ববর্তী প্রশাসনের একটি অংশ এবং রাজনৈতিক পরিচয়ধারীরা এই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছেন। এমনকি অর্থের বিনিময়ে বিভাগীয় শিক্ষককে প্রভাবিত করার চেষ্টার অডিও ফাঁস হওয়ার ঘটনাও ঘটে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের আদর্শবিরোধী কর্মকাণ্ড, নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর সক্রিয় তৎপরতা বা ব্যক্তিগত অনৈতিক আচরণের ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও কিছু প্রার্থীকে বিশেষ পরিচয়ের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ তোলেন তারা।
এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পাঁচটি জরুরি দাবি জানান। প্রধান দাবিগুলো হলো- নিয়োগ-সংক্রান্ত এসব অভিযোগের দ্রুত, স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত-কমিটি গঠন করা এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট নিয়োগ বা সুপারিশ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা। তদন্ত কমিটিতে যেন অরাজনৈতিক, নীতিনিষ্ঠ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত হন এবং আঞ্চলিকতা, রাজনৈতিক পরিচয়, অর্থনৈতিক লেনদেন বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে কাউকে অগ্রাধিকার দিলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা। ভবিষ্যতের সব নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে একটি ‘ট্রান্সপারেন্ট রিক্রুটমেন্ট প্রটোকল (TRP)’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করারও দাবি তাদের।
এক সাবেক শিক্ষার্থী ড. নুরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। তাদের বাদ দিয়ে কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল বা জেলা থেকে ৮টি পদের মধ্যে ৫-৬টি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাই এখানে স্বজনপ্রীতির সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। আমরা আরও আশঙ্কা করছি যে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল, তা না হলে একটি অঞ্চল থেকেই এত প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার কারণ কী? বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এত মেধাবী শিক্ষার্থী থাকা সত্ত্বেও তারা কেন নির্বাচিত হলো না?
তিনি আরও বলেন, এখানে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে স্বজনপ্রীতি অথবা প্রশ্ন ফাঁস- এই দুইয়ের যেকোনো একটি ঘটনা ঘটেছে, বিশেষত যখন চেয়ারম্যান ও সিন্ডিকেট সদস্য দুজনই একই অঞ্চলের। তাই এই নিয়োগ বোর্ডের সুষ্ঠু তদন্ত অত্যন্ত জরুরি। আমরা চাই যোগ্য ও মেধাবীরাই সুযোগ পাক, মেধার সঙ্গে কোনো আপস করা যাবে না।
আরেক সাবেক শিক্ষার্থী ড. মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, চব্বিশ-পরবর্তী বাংলাদেশে আমাদের আশা ছিল- নিয়োগ হবে স্বচ্ছ, ন্যায়সঙ্গত ও বৈষম্যহীনভাবে। কিন্তু এ নিয়োগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কথাগুলো ছড়িয়েছে, সেগুলো যদি সত্য হয়, তাহলে তা পুরো জাতির জন্যই একটি প্রহসন হবে। এখানে কেবল একটি জেলা- পিরোজপুর- থেকে নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। রাবির আরবি বিভাগে ২০১৩ সালের পর থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো নিয়োগ হয়নি। এখান থেকে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বের হয়েছেন, যারা শিক্ষক হওয়ার যোগ্য। কিন্তু তারা কোন অদৃশ্য কারণে নিয়োগ পাননি এটা আমাদের জানা নেই। আমাদের দাবি একটাই, যতক্ষণ না সুষ্ঠু তদন্ত হবে ততক্ষণ এই নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে হবে।
জুবায়ের জিসান/এআরবি