বেগম রোকেয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, যা বললেন রাবি শিক্ষক

বেগম রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেনকে ‘কাফির-মুরতাদ’ উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মাহমুদুল হাসান। যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। সেই পোস্টের প্রেক্ষিতে আবারও একটি পোস্ট করেছেন ওই শিক্ষক। সেখানে তিনি বেগম রোকেয়াকে আল্লাহ তায়ালার নাজিলকৃত কিতাব অস্বীকারকারী বলে উল্লেখ করেছেন।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট করে অধ্যাপক খন্দকার মাহমুদুল হাসান এসব বলেন।
সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নাজিলকৃত কিতাব অস্বীকার করেছেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাত অস্বীকার করেছেন, তাকে প্রতারক বলেছেন, আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান নিয়ে কটূক্তি করেছেন। এত কিছুর পরে কোনো মানুষের ঈমান থাকতে পারে না। আমার বক্তব্য একটু ফতওয়ার মত মনে হচ্ছে। ফতওয়া দেওয়ার অধিকার আলেমদের, আমার না। এই জায়গায় অনধিকার চর্চা করেছি বলতে পারেন। ঈমান ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে যার মোটামুটি ধারণা আছে, তিনি কখনই এমন কাউকে ঈমানদার বলবেন না।
তিনি সেখানে আরও লিখেছেন, কী অদ্ভুত ব্যাপার, একজন মানুষ কিতাব অস্বীকার করল, রিসালাত অস্বীকার করল, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রতারক বলল, তার পক্ষে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। ভালোবাসা কার প্রতি? আল্লাহর রাসুলের প্রতি, নাকি তাঁকে (সা.) অস্বীকারকারীর প্রতি?
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, একই বিভাগের একজন শিক্ষক যখন কোনো ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বকে ঘৃণামূলক ভাষায় আক্রমণ করেন, তখন সেটা শুধু ব্যক্তিগত মতামত থাকে না, বরং শিক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে আমরা দায়িত্বশীল ও শালীন আচরণ প্রত্যাশা করি। এমন বক্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং এটি বন্ধ হওয়া উচিত।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জেমস সরকার বলেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক যখন কাউকে ‘কাফির’ বা ‘মুরতাদ’ বলেন, সেটা শুধু ব্যক্তিগত মত নয়; এটি ঘৃণামূলক বক্তব্য। এতে সমাজে অসহিষ্ণুতা বাড়ে এবং সহিংসতার ঝুঁকি তৈরি হয়। বিশ্ববিদ্যালয় একজন শিক্ষকের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করে।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজ বলেন, একজন শিক্ষক নাগরিক হিসেবে নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে মতামত প্রকাশ করতেই পারেন। সামাজিক মাধ্যমে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ তিনি করতেই পারেন। ধর্মীয় বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা থাকতেই পারে, আর তা গণতান্ত্রিক সমাজে আলোচনার অংশ।
এর আগে বিকেলে সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মাহমুদুল হাসান বলেন, আমি যে ক্যাপশন দিয়ে পোস্টটি শেয়ার করেছি সেই পোস্টটাতে বিস্তারিত বলা আছে। আপনারা যদি সেটা পড়ে থাকেন তাহলে বুঝতে পারবেন। আমার বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে চাইলে ভালো কোনো আলেমের কাছে জানতে পারেন। কাউকে হেয় করার জন্য আমি মন্তব্যটি করিনি। এটি ছিল আমার ব্যক্তিগত মতামত।
জুবায়ের জিসান/আরএআর