‘তৎকালীন ভিসি ও প্রো-ভিসির ক্লাস নেওয়ার খবর পেয়ে গিয়েছিলাম, তারাও পলাতক’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আম্মার। রোববার (২১ ডিসেম্বর) সকালে তিনি রাকসু ভবনের সামনে অবস্থান নেন এবং পরে ওই ডিনদের দপ্তরে দপ্তরে যান।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আওয়ামীপন্থী ডিনদের ভূমিকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অসন্তোষের কথা তুলে ধরে উপাচার্য বরাবর একটি লিখিত আবেদন প্রস্তুত করেন আম্মার। ওই আবেদনে ছয়জন ডিনের নাম উল্লেখ করে তাদের ডিন পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।
তবে সকাল থেকে সংশ্লিষ্ট ডিনদের কেউই ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন না। এ অবস্থায় গণমাধ্যমের সামনে মুঠোফোনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন রাকসু জিএস। ফোনালাপে ডিনরা দায়িত্বে না থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
যাদের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে, তারা হলেন- আইন অনুষদের আবু নাসের মো. ওয়াহিদ, বিজ্ঞান অনুষদের নাসিমা আখতার, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের এ এস এম কামরুজ্জামান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের এস এম একরাম উল্লাহ, প্রকৌশল অনুষদের বিমল কুমার প্রামাণিক ও ভূবিজ্ঞান অনুষদের এ এইচ এম সেলিম রেজা।
উপাচার্য বরাবর লেখা ওই পত্রে বলা হয়, জুলাই গণ- অভ্যুত্থান ও পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় তাদের ভূমিকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। ওই সময়ের কিছু সিদ্ধান্ত, বক্তব্য ও অবস্থান শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, অধিকার ও স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল- এমন অভিযোগ উঠেছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলেও পত্রে উল্লেখ করা হয়।
পদত্যাগপত্রে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক স্বার্থ ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তারা স্বেচ্ছায় ডিনের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ডিনদের কল দেওয়ার পর সালাহউদ্দিন আম্মার আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের খুঁজতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগে তিনি সাবেক উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার ও সাবেক সহ–উপাচার্য মো. সুলতান-উল-ইসলামকে খুঁজতে যান। সেখানে না পেয়ে তিনি বিভাগের সভাপতির কাছে যান। তাকে জানানো হয়, এই দুই শিক্ষক বিভাগে নেই।
জিএস আম্মারসহ অন্যরা তখন সেখান থেকে বের হয়ে যান। এরপর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজী ভবনের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক এন এ এম ফয়সাল আহমেদকে খুঁজতে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাকসুর জিএস সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, আওয়ামীপন্থী ছয়জন ডিনের কেউই ক্যাম্পাসে আসেননি। তাদের কল দেওয়া হয়েছিল। তখন তারা জানিয়েছেন, ভিসি মহোদয়কে জানিয়ে দিয়েছেন যে তারা দায়িত্বে থাকবেন না। এখন দেখা যাক, ভিসি কী সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি আরও বলেন, তৎকালীন ভিসি ও প্রো-ভিসি ক্লাস নেওয়ার খবর পেয়ে আজ গিয়েছিলাম, তারাও একরকম পলাতক। নোমানী হত্যা মামলার ১১ নম্বর আসামি আইইআর বিভাগের শিক্ষক ফয়সাল ইস্কার্সনে গিয়েছেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে।
এছাড়া আজ মোটামুটি সব দপ্তরে আওয়ামীপন্থীদের দপ্তরগুলো তালাবদ্ধ দেখা গেছে। আমিও এটাই চাই বিচার না হওয়া পর্যন্ত তালাবদ্ধ থাকুক। পাশাপাশি বিগত জুলাইয়ে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া শিক্ষকদের একটি তালিকা করেছি। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং অন্যান্য সংগঠনের কাছেও থাকা তালিকা আহ্বান করছি অনুগ্রহপূর্বক। আমার তালিকায় অনেকে বাদ পড়তে পারে, সেগুলো আপনাদের কাছ থেকে আগামী তিন দিনের মধ্যে সংগ্রহ করব।
জুবায়ের জিসান/এআরবি