মৃত বাঘ দিয়ে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা শুরু

মৃত রয়েল বেঙ্গল টাইগার দিয়েই গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেছেন খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। খুলনার জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্টের বনবিলাস চিড়িয়াখানায় মারা যাওয়া একটি বাঘ দিয়ে এ গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, গত ২০ জানুয়ারি খুলনার জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্টের বনবিলাস চিড়িয়াখানায় বার্ধক্যজনিত কারণে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার মারা যায়। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ মৃত বাঘটিকে মাটি চাপা না দিয়ে ভেটেরিনারি শিক্ষায় সহায়তার ইচ্ছা পোষণ করে। এমন ইচ্ছার খবর খুলনা প্রাণিসম্পদ অফিসের মাধ্যমে জানতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পরবর্তীতে মৃত বাঘটি পরিদর্শন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের নির্দেশ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শহীদুর রহমান খান। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি, এনিম্যাল অ্যান্ড বায়োমেডিকেল সায়েন্সেস অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি মেডিকেল টিম চিড়িয়াখানায় মৃত বাঘটি পরিদর্শন করেন। একই সঙ্গে জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে বাঘটিকে খুকৃবির ভেটেরিনারি, এনিম্যাল অ্যান্ড বায়োমেডিকেল সায়েন্সেস অনুষদের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
পরবর্তীতে বাঘটি দৌলতপুরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে আনা হয় এবং বাঘটির চামড়া, কঙ্কাল ও অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সমূহ সংরক্ষণ করা হয়। যা ভবিষ্যতে ভেটেরিনারি, এনিম্যাল অ্যান্ড বায়োমেডিকেল সায়েন্সেস অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের ব্যবহারিক পাঠদানে ও গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হবে।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি, এনিম্যাল অ্যান্ড বায়োমেডিকেল সায়েন্সেস অনুষদের শিক্ষার্থী মাহিরুল হল শিলং ও পিয়াল রায় বলেন, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা ও গবেষণার কাজে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া সত্যিই আনন্দদায়ক ও গর্বের। এই ধরণের অবিস্মরণীয় ও ঐতিহাসিক কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শহীদুর রহমান খানকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এম এ হান্নান বলেন, ভেটেরিনারি শিক্ষা ও গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একটি দ্বার উন্মোচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতি শিক্ষকরা চিরকৃতজ্ঞ। এই ধরনের বিভিন্ন শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে খুকৃবি উচ্চতর কৃষি শিক্ষার সকল স্তরে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে শিক্ষা ও গবেষণায় এই ধরনের নতুন নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হবে খুকৃবি।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি ও হিস্টোলজি বিভাগের প্রস্তাবিত ‘এনাটমি মিউজিয়াম’ বাস্তবায়িত হলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের পুরো দেহের কঙ্কালটিকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মোচন করা হবে। মৃত বাঘটি হস্তান্তরের জন্য বন বিলাস চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শহীদুর রহমান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দিন দিন শিক্ষা ও গবেষণায় নতুন নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হবে। মৃত বাঘটির কঙ্কাল ও অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রতঙ্গ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হবে। খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শিক্ষা-গবেষণার মাধ্যমে কৃষি শিক্ষায় দক্ষিণ এশিয়ার একটি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করবে।
আরএআর