নোবিপ্রবির ভর্তিতে জিপিএ নম্বর নিয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ভর্তিতে জিপিএ নম্বর ১০০ রাখায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী।
গুচ্ছভুক্ত ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (জিএসটি) ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীরা আগামী বুধবার (২৪ নভেম্বর) থেকে বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) রাত ১২টা পর্যন্ত (admission.nstu.edu.bd) এ ওয়েবসাইটে গিয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।
ভর্তির আবেদন ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের প্রতি ইউনিটে ৬০০ টাকা করে পরিশোধ করতে হবে। এ ইউনিটের শিক্ষার্থীরা এ, বি, সি এবং ডি গ্রুপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ‘বি’ ইউনিটের শিক্ষার্থীরা ডি এবং ই গ্রুপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ‘সি’ ইউনিটের শিক্ষার্থীরা ডি এবং এফ গ্রুপের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
শনিবার (২০ নভেম্বর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সভাপতি ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম।
চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অটোপাসের বিষয়টি মাথায় রেখে ঢাকা, চট্টগ্রাম, জগন্নাথ ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল থেকে ২০ নম্বর রেখেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, গুচ্ছভুক্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল থেকে আলাদা নম্বর রাখেনি। কিন্তু নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জিপিএ-১০০ নম্বর রাখা হয়েছে। যার মধ্যে এসএসসি থেকে ৫০ এবং জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে দেওয়া অটোপাসের এইচএসসিতে ৫০ নম্বর রাখা হয়েছে। বলা চলে এইচএসসি পরীক্ষায় ফলাফলের ওপরই এখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নির্ভর করছে।
জিএসটি স্কোর ৬২.৫ পাওয়া ভর্তিচ্ছু তানভীর শরিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, জিপিএর ওপর ১০০ নম্বর রাখা আমি অযৌক্তিক মনে করছি। জিপিএ ১০০ রাখা মানে জিপিএর নম্বর দিয়ে মূলত মেরিট পজিশন নির্ধারণ করা হচ্ছে। আমি ৬২.২৫ পেয়েও যারা ৪৫ পেয়েছে, তাদের নিচে পড়ে যাচ্ছি শুধুমাত্র জিপিএর ওপর ১০০ নম্বর রাখার কারণে। তাহলে গুচ্ছভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার যৌক্তিকতা কি। জিপিএর নম্বরের ভিত্তিতেই মেরিট প্রকাশ করতে পারত। তাছাড়া এবার যেহেতু এইচএসসিতে অটোপাস দিয়েছে, আর এ অটোপাসে সঠিক মেধার মূল্যায়ন হয়নি। তাই বিতর্কিত রেজাল্টের ওপর নম্বর রাখা ঠিক মনে করিনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমি আশা করি।
নুর মোহাম্মদ আতিক নামে এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেখানে ঢাবি, চবি, জবি, জাবিসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ২০ এর বেশি জিপিএ নম্বর রাখেনি, সেখানে নোবিপ্রবি ১০০ ধরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মতো জিপিএ বেজড করে ফেলবে কি না? একজন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় পেল ৩০ তার জিপিএতে আছে ১০০ আরেকজন পরীক্ষায় ফেল ৫০ তার জিপিএতে আছে ৭৫ তাহলে ৩০ পাওয়াটা এগিয়ে গেল না? এটা চরম বৈষম্য। পাবলিক ভার্সিটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ফলো করবে কেন? এ বছর অটোপাস, ভুরিভুরি জিপিএ ফাইভ, এটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিবেচনা করা উচিত।
পলাশ হাসান নামে এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নোবিপ্রবিতে জিপিএর ওপর ১০০ নম্বর দেওয়া অযৌক্তিক। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমে ১০০ নম্বর রাখার সিদ্ধান্ত নেয়, পরে শিক্ষার্থীদের উৎকণ্ঠায় তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ২০ নম্বর এ রূপান্তর করেন। আমরা আশা করব নোবিপ্রবি প্রশাসনও শিক্ষার্থীবান্ধব হিসেবে আমাদের উৎকণ্ঠার কথা এবং অটোপাসের কথা চিন্তা করে জিপিএর ওপর নম্বর কমিয়ে ২০/১০ নির্ধারণ করবেন।
ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে জিপিএ ১০০ নম্বর নির্ধারণ যৌক্তিক জানিয়ে নোবিপ্রবির সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভর্তি কমিটি আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিতে না পারলেও এসএসসি পরীক্ষার সময় তারা পড়াশোনা করেই পরীক্ষা দিয়েছে। সেই দিক বিবেচনায় আমরা জিপিএকে গুরুত্ব দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের আলোচনায় এটি যৌক্তিক মনে হয়েছে বিধায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন ভর্তিচ্ছুদের প্রতিক্রিয়ায় কমিটি মনে করলে বিষয়টি নিয়ে আবার বসে আলোচনা করবে। সেখানে কমানো দরকার মনে হলে পরিবর্তন হবে, অন্যথায় এটিই থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেহেতু জেএসসি এবং এসএসসি ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফলাফল দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এটা অটোপাস হলেও ভ্যালুলেস নয়। কারণ যারা জেএসসি এবং এসএসসি ভালো করেছে, তারাই কিন্তু এইচএসসিতে ভালো করেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় জিপিএর যে সিদ্ধান্ত হয়েছে এটি ভর্তি কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত। করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা এবারে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে না পারলেও এসএসসি পরীক্ষার সময় তারা পড়াশোনা করেই পরীক্ষা দিয়েছে, সেই দিক বিবেচনায় আমরা জিপিএকে গুরুত্ব দিয়েছি। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ জানিয়েছে, ২৩ তারিখ একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং রয়েছে সেখানে আমরা বিষয়টি আলোচনা করব।
হাসিব আল আমিন/এসএসএইচ