দ্বিতীয় দিনেও আন্দোলন করছেন বেরোবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

Dhaka Post Desk

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, বেরোবি

২০ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:৫৮ পিএম


দ্বিতীয় দিনেও আন্দোলন করছেন বেরোবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

বিভাগীয় প্রধান জনি পারভীনের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলনে নেমেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা।

লিখিত অভিযোগে শিক্ষকরা জানান, অর্থনীতি বিভাগ সেশনজটমুক্ত ও আইকিউএসি রেটিংয়ে প্রথম স্থানপ্রাপ্ত বিভাগ ছিল। কিন্তু জনি পারভীন বিভাগীয় প্রধান হওয়ার পর থেকে লাগাতার অনুপস্থিত থাকছেন। করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ অনলাইনে ক্লাস চালু করলেও তিনি এক বছর সাত মাসে কোনো একাডেমিক সভা আহ্বান এবং শিক্ষকদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করেননি। ফলে বিভাগের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সেশনজটে পড়েছে বলে ছয়জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত এক লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে।

অভিযোগপত্রে বিভাগের অধ্যাপক ড. মোরশেদ হোসেন, সহকারী অধ্যাপক খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী অধ্যাপক শাফিউল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক বেলাল উদ্দীন এবং প্রভাষক কাজী নেওয়াজ মোস্তফা স্বাক্ষর করেন।

বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাফিউল ইসলাম বলেন, ক্লাস বন্ধ রেখে আন্দোলনে নামা কোনো শিক্ষকেরই কাম্য নয়। শিক্ষক হিসেবে তো আমাদের আত্মসম্মান বোধ রয়েছে। ক্লাস শুরু করতে হলে একটি মিটিং করতে হবে। আমরা তার সঙ্গে বসতেই পারছি না। তিনি মিটিংয়ে কাগজ ছুড়ে মারেন। বকাবকি ও হয়রানি করেন। তার অসৌজন্যমূলক ও হয়রানিমূলক আচরণের কারণে আমরা আজ আবারও আন্দোলনে নেমেছি। আমরা আসলে এই বিভাগীয় প্রধান চাই না। তার সঙ্গে মিটিংয়ে নিরাপদ বোধ করছি না তাই আমরা তার পদ থেকে অপসারণ চাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে এ দাবি মেনে নিলেই আমরা চলে যাব। না হলে আরও কঠিন আন্দোলনে যাব।

সহকারী অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলাম। ওই বিষয়ে তদন্ত কমিটিও রিপোর্ট জমা দিয়েছে। প্রশাসন থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় আজ আমরা আন্দোলনে নেমেছি। জনি পারভীনকে অপসারণ করে নতুন বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ দিলেই আমরা ক্লাসে ফিরব।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রিপন বলেন, আমাদের তিন মাস ধরে ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। আমরা বিভাগীয় প্রধানকে জানিয়েছি। তিনি সমাধান দিতে পারেননি। এর আগেও আন্দোলন করেছি। কোনো ফলাফল আসেনি। তাই বাধ্য হয়ে আজ আন্দোলনে নেমেছি। আশা করছি বিভাগীয় প্রধান পরিবর্তন হলে আমাদের সমস্যাও সমাধান হবে।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া বলেন, বিভাগীয় প্রধান আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। জুম মিটিংয়ের মধ্যেও আমাদের অপমান করেন। তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলেই আমাদের রাগ দেখাত। আমাদের ক্লাস পরীক্ষার কথা বললেও তিনি ব্যবস্থা নেননি। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার এক মাস পার হতে চললেও তিনি ক্লাস পরীক্ষা শুরু করতে পারেননি। এটি তার অপারগতা। আমরা মনে করি বিভাগীয় প্রধান পরিবর্তন হলে ক্লাস পরীক্ষা আবারও সচল হবে। 

এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জনি পারভীন সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমিই শিক্ষকদের হ্যারেজমেন্টের শিকার। তারাই রেজাল্ট আটকে রেখেছিল। ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর জন্য একাধিকবার মিটিং ডাকলেও শিক্ষকরা আসেনি। বিভিন্ন সময় শিক্ষকরাই খারাপ আচরণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিষয়গুলো অবগত করেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. গোলাম রব্বানী বলেন, অর্থনীতি বিভাগে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে।

উল্লেখ্য, রোববার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এছাড়া গত ১৮ নভেম্বর অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জনি পারভীনের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে বিভিন্ন অভিযোগ উল্লেখ করে রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেন বিভাগের শিক্ষকরা।

শিপন তালুকদার/এসপি

Link copied