পুনর্বাসন কেন্দ্রে যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন

গাজীপুরের ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন চিত্রনায়ক অনিক রহমান অভিসহ একাধিক কিশোর ও তরুণের ওপর চালানো যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ‘এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠন।
শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এ কর্মসূচি থেকে ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রের পরিচালক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, আইনে ধর্ষণের লিঙ্গ-নিরপেক্ষ সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং দণ্ডবিধি ৩৭৫ ধারার লিঙ্গ-নিরপেক্ষ সংস্কারের দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মাহিন মুর্তজা অনিক বলেন, একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারি যে, গাজীপুরের ‘ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে’ আশ্রিত অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরদের ওপর পাশবিক যৌন নির্যাতন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক ফিরোজা নাজনীন ওরফে বাঁধন।
চিকিৎসা দেওয়ার নামে তিনি পছন্দের পুরুষ রোগীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে তাদের সঙ্গে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তার এই বিকৃত আচরণ ও জঘন্য অপরাধকে ‘ধর্ষণ’ ব্যতীত অন্যকিছু বলার সুযোগ নেই। একজন ধর্ষক, ধর্ষণের অপরাধের জন্য যেই শাস্তি পান, ফিরোজা নাজনীন বাঁধনকেও একই শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাই, বলেন মাহিন মুর্তজা অনিক।
এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাদিম বলেন, একজন নারী যে একজন পুরুষের ওপর যৌন নির্যাতন করতে পারে ও পুরুষকে ধর্ষণ করতে পারে, এ ধারণা উন্নত বিশ্বে স্বীকৃত হলেও, বাংলাদেশের বর্তমান আইনে স্বীকৃত নয়। ব্রিটেনের ল্যাংক্যাস্টার ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ডক্টর সিওভান উইয়ার একটি গবেষণায় দেখান নারী কর্তৃক পুরুষ ধর্ষণ সম্ভব। বরং অসম্ভব মনে করাটাই একটা মিথ বা কাল্পনিক উপকথা। গবেষণাটি ২০১৭ সালে প্রতিবেদন আকারে বিবিসিতে প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ফিরোজা নাজনীন বাঁধনের মত বিকৃত মানসিকতার নারী কর্তৃক অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর ও পুরুষ রোগীদেরকে চিকিৎসা দেওয়ার নামে মাদকাসক্ত করে যৌন নিপীড়ন ও জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করার ঘটনা আমাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, নারীও ধর্ষণ করতে পারে এবং পুরুষও নারীর দ্বারা ধর্ষিত হতে পারে। এখন সময় এসেছে এ চরম সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার।
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য খালিদ মাহমুদ বলেন, চিত্রনায়ক অনিক রহমান অভিসহ বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর বক্তব্য ও র্যাবের তদন্তের মাধ্যমে সামনে এসেছে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের আড়ালে ফিরোজা নাজনীন কর্তৃক কিশোর ও পুরুষদের ওপর যৌন নিপীড়ন এবং জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করার বর্ণনা, যা অবশ্যই ‘ধর্ষণ’ হিসেবে বিবেচ্য। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, আমাদের দেশের আইন ও দণ্ডবিধিতে নারী কর্তৃক পুরুষ ধর্ষণকে ‘ধর্ষণ’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয় না।
এইচআর/আরএইচ