স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এখন রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারব

‘গরু, ছাগল ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এক রুমেই থাকতাম। নিজে চোখে দেখতে পারি না। কীভাবে ঘর তৈরি করব আর টাকা কোথায় পাব। শাক-সবজি বিক্রি করে জীবনযাপন করি। যা আয় হয় তার চেয়ে খরচ বেশি। তারপর সাংবাদিক ভাইয়েরা এসে ছবি ও ভিডিও নিয়ে যায়। আজকে আমাকে সেভ হিউম্যান লাইফ একটি ঘর তৈরি করে দিল। আমার সন্তানদের পড়াশোনার খরচ বাবদ একটি বকনা গরু দিল। আজকে অনেক দিন পর স্ত্রী-সন্তানসহ ভালোভাবে রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারব।’
গরু ও ঘর পাওয়ার পর কথাগুলো বলছিলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ফরিদ হোসেন। শুক্রবার (১১ মার্চ) দুপুরে একটি বকনা গরু ও নতুন ঘরের চাবি ফরিদের হাতে তুলে দেন সেভ হিউম্যান লাইফের চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হেলাল।
মাত্র দুই বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারান ফরিদ হোসেন। তারপর থেকে অন্যের সহযোগিতা নিয়ে চলতেন তিনি। পরবর্তীতে আবছা আলো আর আন্দাজের ওপর ভর করেই চলতে শুরু করেন তিনি।
সংসার জীবনে দুই ছেলে ও দুই মেয়ের বাবা ফরিদ। ছোটবেলা থেকেই শাক, আর কুমড়া বিক্রি করে আয়-রোজগার করেন। স্ত্রী নাজমা বেগম কাজ করেন অন্যের বাসায়। আর বাড়িতে পালন করেন একটি গরু ও দুটি ছাগল। স্ত্রী-সন্তানসহ থাকেন অনেক বছর আগের তৈরি করা একটি মাটির ঘরে। আলাদা কোনো ঘর না থাকায় গরু, ছাগলের সঙ্গে স্ত্রী-সন্তানসহ বসবাস করে আসছেন ফরিদ হোসেন।
ফাটল ধরা ও জরাজীর্ণ সেই মাটির ঘরটির অবস্থা বেশ নাজুক। যেকোনো সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টিতে ঘরের ভেতরে পানি পড়ে। অন্যদিকে এক চৌকিতে জায়গা হয় না সবার। রাতে গরু-ছাগলের মলমূত্রের গন্ধে ঘুমাতে পারেন না তারা। তাই রাস্তায় পায়চারি বা চৌকির পাশে বসে রাত কাটাতে হতো ফরিদ হোসেনকে।
ফরিদ হোসেনের এই দুরবস্থা তুলে ধরে গত ২২ ফেব্রুয়ারি নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে ‘পরিবার নিয়ে গোয়াল ঘরে বাস করেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ফরিদ’ শিরোনামে ভিডিওসহ সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে তা নজরে আসে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ হিউম্যান লাইফের। সেই প্রেক্ষিতে ফরিদ হোসেনকে একটি বকনা গরু ও ঘর তৈরি করে দিয়েছে সংগঠনটি।
স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংগঠন আকচা তরুণ শক্তির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, আমাদের প্রতিবেশী ফরিদ ভাই শাক-সবজি বিক্রি করে জীবনযাপন করেন। একটি রুমের একটি চৌকিতে গরু ছাগলসহ ছয়জন থাকত। অনেক কষ্ট হতো তাদের। আজকে থাকার ঘর পেলেন তিনি। এখন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালোভাবে বসবাস করতে পারবেন।
ফরিদের মেয়ে বলেন, আমাদের অনেক কষ্ট হত এক ঘরে থাকতে। বাবা সারারাত ঘুমাতে পারতেন না। এক সঙ্গে থাকায় গরু-ছাগলের মলমূত্রের গন্ধ । আজকে আমাদের খুশির দিন৷ সেভ হিউম্যান লাইফ আমাদের ঘর তৈরি করে দিল। এখন আমরা চার ভাই-বোন ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারব।
ফরিদের স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, আমরা অনেক কষ্টে ছিলাম। আজকে ঘর পেলাম। আমাদের একটা গরু দিল। আজকে আমি অনেক খুশি। নিজের স্বামীর সামর্থ্য ছিল না, বুকে কষ্ট চাপা রেখে চলতাম। আজকে সেভ হিউম্যান লাইফ ঘর ও গরু দিল। রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারব।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ হিউম্যান লাইফের সভাপতি সাইফুল্লাহ আল হেলাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফরিদ হোসেন ভাইয়ের একটি জরাজীর্ণ রুমে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট। সেটি আমাদের চোখে পরে আমরা তাকে একটি ঘর উপহার দেওয়ার চিন্তা করি। তারপরে আমরা ঢাকা পোস্টের স্থানীয় প্রতিনিধির সঙ্গে ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরে ঘর তৈরির কাজ শুরু করি। আজকে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে তার সন্তানদের পড়াশোনার খরচের জন্য একটি বকনা গরু ও থাকার জন্য একটি ঘর তৈরি করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের সমাজে ফরিদের মতো আরও অনেক অসহায় মানুষ আছেন, যা আমাদের নজরে আসছে না। সমাজের বিত্তবান মানুষদের এমন কাজে এগিয়ে আসা উচিত।
এম এ সামাদ/আরএআর