শরীর থেকে খুলে পড়ছে মাংস, টাকার অভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা

শীর্ণ দেহে বিছানায় পড়ে আছেন। হাত-পা নড়ানোর শক্তি নেই। দুই দুইবার স্ট্রোক করেছেন। পায়ের রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গেছে। এক পায়ে পচন ধরে মাংস খসে খসে পড়ছে। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তিনি হলেন সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের সয়াধানগড়া মহল্লার মৃত ফয়েজ আহমেদের স্ত্রী বৃদ্ধা আমিনা খাতুন (৬৯)।
সরেজমিনে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ঘরে একটি ইলেকট্রনিক বেডে ছবির মতো শুয়ে আছেন। পারেন না ঠিকমতো নড়াচড়া করতে। দুইবার স্ট্রোক করায় হারিয়েছেন স্মৃতিসহ মুখের ভাষা। চোখ ভরা কথা থাকলেও তিনি যেন নির্বাক। ডান পায়ের হাটু থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত ব্যান্ডেজ করা। তার ওপর দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে অসংখ্য মাছি, বের হচ্ছে দুর্গন্ধ।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দুই ছেলে ও এক মেয়ের জননী বৃদ্ধা আমিনা। স্বামী মারা গেছেন বেশ কিছু বছর আগে। ছেলে মেয়েদের সংসারেও নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। বড় ছেলে কনস্ট্রাকশন সাইটে কাজ করে কোনো রকমে নিজের সংসার চালান। ছোট ছেলে করেন রং-তুলির কাজ। তবে করোনার কারণে তার কাজটাও বন্ধ হয়ে গেছে।
আমিনা খাতুনের ছোট ছেলে মো. সুমন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০২১ সালের জুন মাসে মা প্রথমে স্ট্রোক করেন। পরবর্তীতে নভেম্বরে আবারও স্ট্রোক করেন। এরপর ২০২২ এর ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে তার পায়ের রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় মাসখানেক সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাও করিয়েছি। কিন্তু তেমন কোনো লাভ হয়নি। ঢাকা যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক।
তিনি আরও বলেন, এখন পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ থেকে মাংস পঁচে খুলে খুলে পড়ছে। মাংস খুলে পড়ে পায়ের পাতা বের হয়ে গেছে। এখন যেকোনো মুহূর্তে পায়ের পাতাও আলাদা হয়ে যাবে।
প্রতিদিন পায়ের ড্রেসিং করাতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে নার্স দিয়ে পরিষ্কার (ড্রেসিং) করাতাম। কিন্তু পায়ের পঁচা মাংসের গন্ধে তেমন কেউ আসতে চায় না। আবার কেউ আসতে চাইলেও অনেক বেশি টাকা চায়। তাই টাকার অভাবে সেটাও করতে পারছি না। এখন নিজেই পরিষ্কার (ড্রেসিং) করি। চিকিৎসক বলেছেন, এখন পা কেটে ফেলতে হবে। না হলে মাকে আর বাঁচানো যাবে না। কিন্তু সেটা করতে গেলেও লাখ টাকার ওপর দরকার।
তিনি বলেন, টাকার জন্য চিকিৎসা করাতে পারছি না মর্মে আর্থিক অনুদান চেয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ে আবেদন করা হয়েছে। সেখানেও সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তাই আমার মাকে বাঁচাতে সমাজের উচ্চবিত্তদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি।
বাসার মালিক মো. সুমন বলেন, ছেলে ও পুত্রবধূ সেবাযত্ন করলেও টাকার অভাবে তেমন কিছু করতে পারছে না। তাদের এই অবস্থা দেখে আমি নিজেও বাড়ির ভাড়া নেইনি। সবাইকে অনুরোধ করবো অসুস্থ মানুষটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
দ্য বার্ড সেফটি হাউসের চেয়ারম্যান পরিবেশ ও সমাজকর্মী মামুন বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, এমন চিকিৎসার জন্য অনেক সাহায্যের অনেক আবেদন রয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তার চিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। আমি চেষ্টা করব তার জন্য আরও কিছু করতে।
সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সুখ পাখি সিরাজগঞ্জের পরিচালক শেখ রজব ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি জানার পর আমাদের সংগঠন থেকে ৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি তাকে আরও কিছু সহায়তা দেওয়ার।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এগুলো একটু সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তারপরও আমি চেষ্টা করবো তাদের জন্য কিছু করার।
সিরাজগঞ্জ সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. মতিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমি আপনার মাধ্যমেই জানলাম। আমি বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে যতটা দ্রুত সম্ভব তাদের সহায়তা করবো। এছাড়াও আমি চেষ্টা করব আমার অধিদপ্তরের বাইরেও কোনোভাবে তাকে সহযোগিতা করা যায় কি না।
এসপি