বগুড়ায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট

বগুড়ায় বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পরিবহন মালিক শ্রমিক যৌথ কমিটি। মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে পরিবহন মালিক শ্রমিক যৌথ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা আব্দুল মান্নান আকন্দ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৫টায় বগুড়া শহরের চারমাথায় মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় পরিবহন মালিক শ্রমিক যৌথ কমিটির নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বগুড়া পরিবহন মালিক শ্রমিক যৌথ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা আব্দুল মান্নান আকন্দ লিখিত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, বগুড়া জেলা পরিবহন সেক্টরে অরাজকতা সৃষ্টিকারী চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আমাদের এই সংবাদ সম্মেলন। দীর্ঘদিন যাবত পরিবহন সেক্টর খুব ভালো চলছিল। কিন্তু বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের ব্যবহার করে আজ সন্ত্রাসী হামলা করেছেন।
তিনি বলেন, বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে মঞ্জুরুল আলম মোহনের বড় ভাই রেজাউল করিম বাদশা ধানের শীষে প্রতীকে ভোট করছেন। যার কারণে তার ভাইকে সন্ত্রাসী কায়দায় নির্বাচনে বিজয়ী করার জন্য তিনি এই জঘন্য কাণ্ড ঘটিয়েছেন। তিনি শক্তি প্রদর্শন করার চেষ্টা করেছেন। আমরা টার্মিনালে ভাঙচুর, অগ্নিসংযাগ, পুলিশ ও নিরীহ মালিক-শ্রমিকদের ওপর হামলার বিচার চাই।
এ সময় বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম দাবি করেন, তার অফিস ভাঙচুর করে হামলাকারীরা নগদ অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। টার্মিনালে অপেক্ষামান ৮-১০টি বাসে ভাঙচুর করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পরিবহন মালিক শ্রমিক যৌথ কমিটির সভাপতি শামসুদ্দিন শেখ হেলাল, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সদস্য শাহ আক্তারুজ্জামান ডিউক, জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল লতিফ মন্ডল, আন্তঃজেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল মান্নান মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাতে আব্দুল মান্নান আকন্দ বলেন, সংবাদ সম্মেলনে আমরা কর্মবিরতির ঘোষণা করেছি। কিন্তু বুধবার সকাল ৬টা থেকে সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক যৌথ কমিটি অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানিয়েছে। হামলার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করা হবে।
জানা গেছে, বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইতোমধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছেন। কিন্তু মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম নির্বাচনের বিরোধিতা করে মোটর মালিক গ্রুপের অফিস ও মালামাল তার হেফাজতে চারমাথা বাস টার্মিনাল এলাকায় রাখেন।
মঙ্গলবার সকাল থেকে মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক আহ্বায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের নেতৃত্বে চারমাথায় এলাকায় গিয়ে আমিনুলের নিয়ন্ত্রণে থাকা মোটর মালিক গ্রুপের অফিস দখলের ঘোষণা দিয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এ খবর পেয়ে যুবলীগ নেতা আমিনুলের লোকজন চারমাথা এলাকায় সমবেত হয়। তারা যে কোনো মূল্যে মোহন গ্রুপকে প্রতিহত করার জন্য মাইকে ঘোষণা দেন এবং পরিবহন শ্রমিকদের প্রত্যেককে হাতে লাঠি নিয়ে অবস্থান নিতে বলেন।
খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ ও সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে পুলিশ চার মাথায় অবস্থান নেয়। পুলিশ আমিনুলকে সমঝোতায় প্রস্তাব দিলে আমিনুল পুলিশকে জানিয়ে দেন তারা শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে অপর পক্ষকে প্রতিহত করবেন।
আমিনুল গ্রুপের লোকজন পুলিশের সামনেই লাঠি নিয়ে মিছিল শুরু করেন। এ সময় মোহন গ্রুপের দেড় দুই হাজার নেতাকর্মী সান্তাহার সড়ক দিয়ে এলজিইডির সামনে অবস্থান নেয়। পুলিশ মাঝামাঝি অবস্থান নিয়ে থাকাকালে মোহন গ্রুপের দেড় দুই হাজার লোকজন লাঠিশোটা নিয়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আমিনুল গ্রুপের লোকজনকে ধাওয়া করে। ধাওয়ায় তারা পালিয়ে গেলে মোহন গ্রুপের লোকজন টার্মিনাল এলাকা দখলে নিয়ে শুরু করে ব্যাপক ভাঙচুর। তারা এলোপাতাড়ি যানবাহন ভাঙচুর ছাড়াও আমিনুলের নিয়ন্ত্রণে থাকা মোটর মালিক গ্রুপের অফিস ও তার ব্যক্তিগত অফিস ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রায় আধাঘণ্টা চলে একতরফা তাণ্ডব। এ সময় ভাঙচুরের ছবি তুলতে গেলে জিটিভির ক্যামেরাপার্সন রাজু আহম্মেদকে বেধড়ক মারধর করা হয়।
তাছাড়াও পুলিশের জেলা বিশেষ শাখার কনস্টেবল রমজান আলীকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেলে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ শুরু করে। পুলিশ রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে মোহন গ্রুপের লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ সময় পুলিশ ৯ জনকে আটক করে। সংঘর্ষের কারণে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মহাসড়কে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
সাখাওয়াত হোসেন জনি/আরএআর