কেউ ক্ষমা করেনি রাসেল ভাইপার আর অবুঝ নীলগাইটিকে

ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে টেঁটা দিয়ে খুঁচিয়ে একটি বিষধর রাসেল ভাইপার সাপ মেরেছে স্থানীয়রা। আর দিনাজপুর বিরল উপজেলার ভারত সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে খাবারের সন্ধানে ঢুকে পড়া একটি নীলগাইকে এলাকাবাসী ধাওয়া করে। পরে হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দুটি ঘটনাই ঘটেছে বুধবার। চরভদ্রাসনের চর হরিরামপুর ইউনিয়নের আব্দুল হাই খানের হাট সংলগ্ন ধানক্ষেতে রাসেল ভাইপার সাপটি দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এলাকাবাসী। পরে টেঁটা দিয়ে খুচিয়ে তাকে মেরে ফেলা হয়। তারপর সেটিতে আগুন দিয়ে পুড়িয়েও ফেলা হয়।
এরআগে ১৫ জানুয়ারিও একই ইউনিয়নে আরেকটি রাসেল ভাইপার পিটিয়ে মেরে মাটিতে পুতে রাখা হয়েছিল।
সাপটি যে রাসেল ভাইপারই ছিল ছবি দেখে তা নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক ইব্রাহিম আল হায়দার। তিনি বলেন, এটা বিষধর রাসেল’স ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ। এই সাপটিকে 'আইইউসিএন বাংলাদেশ' ২০০২ সালের নিরীক্ষায় বাংলাদেশে বিলুপ্ত বলে ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ২০১২ সালে (কারো কারো মতে ২০০৯ সালে) পুনরায় রাজশাহীর চরাঞ্চলে দেখা যায় এটি। সম্প্রতি এই সাপটি পদ্মা ও মেঘনা নদীর তীরবর্তী জেলা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও ভোলা, চট্টগ্রাম অঞ্চলের চাঁদপুর, লক্ষীপুর ও চট্টগ্রাম জেলায় দেখা যাচ্ছে। এই প্রজাতির সাপ নিউরোটক্সিক ও হিমোটক্সিক বিষধারণ করে। এই প্রজাতির সাপের দংশনের ফলে প্রাথমিক অবস্থায় দংশিত স্থান ফুলে যায়, ধীরে ধীরে স্নাযুতন্ত্র ও কিডনি বিকল হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
ইব্রাহিম আল হায়দার আরও বলেন, তবে বর্তমানে বাংলাদেশের সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অধিকাংশ জেলা সদর হাসপাতালে এই সাপের বিষের প্রতিষেধক পাওয়া যায়। তাই এই সাপের দংশনের পর দংশনের শিকার রোগীকে অতিদ্রুত হাসপাতালে নেওয়া গেলে মৃত্যু ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
অন্যদিকে বিরল উপজেলার ভারত সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে খাবারের সন্ধানে ঢুকে পড়া একটি নীলগাইকে ধাওয়া দেন স্থানীয়রা।
সীমান্তঘেঁষা এলাকার কামদেবপুরে নীলগাইটিকে দেখেতে পান স্থানীয়রা। এসময় তারা চিৎকার চেঁচামেচি করে সবাই জড়ো হয়ে নীলগাইটিকে ধাওয়া করেন। ভয় পেয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে নীলগাইটি।
বনবিভাগ ও বিজিবির সদস্যরা বিষয়টি জানতে পেরে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে নীলগাইকে ধাওয়া না করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতেও দমেনি এলাকাবাসী। শেষ পর্যন্ত তারা নীলগাইটিকে ধরেন। তারপর বিজিবির সদস্যরা নীলগাইটিকে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়ে মারা যায় নীলগাইটি।
দিনাজপুর বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা বশিরুল মামুন বলেন, সীমান্ত এলাকা হওয়ার কারণে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা থাকায় বিজিবি সদস্যরা প্রাণীটিকে ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানেই প্রাণীটি মারা যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ধাওয়ার কারণে হার্ট অ্যাটাকে নীলগাইটির মৃত্যু হয়েছে।
এনএফ