বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ১০২ শিশুশিল্পীর কণ্ঠে জাতীয় সংগীত

সকাল সাতটায় মায়ের হাত ধরে স্কুলে যায় ফারহানা। তবে আজ তার সঙ্গে বই-খাতা ছিল না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে তার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে সে। অংশ নেয় স্কুলে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন ও গল্পবলা প্রতিযোগিতায়। পরে সবাই মিলে জন্মদিনের কেক কাটে এবং আনন্দ আয়োজনে মেতে উঠে।
বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) নগরীর সফুরা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিশুশিক্ষার্থী ফারহানার মতো বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজারো ছাত্র-ছাত্রীর আনন্দ আয়োজনে কেটেছে। নগরীর সব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রদ্ধা ভালোবাসায় জাতির পিতাকে স্মরণের মধ্য দিয়ে জাতীয় শিশু দিবস ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে।
এ ছাড়া সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলো দিবসটি ঘিরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। দিবসটি উপলক্ষে হাসপাতাল, সরকারি শিশু পরিবার, এতিমখানা, কারাগার, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্র ও শিশুসদনসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া অনুষ্ঠান হয়েছে।
সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়। সকাল ৯টায় রংপুর নগরীর ডিসির মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন করে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন। পরে জাতির পিতা ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদেরসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের স্মরণে পুলিশ প্রশাসন থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
বেলা ১১টায় রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে ১০২ জন শিশুশিল্পীর অংশগ্রহণে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এ সময় সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। পরে একইসঙ্গে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে মুক্তির উৎসব ও সুবর্ণজয়ন্তী মেলার উদ্বোধন করা হয়।
দুপুরে ৫০টি জাতীয় পতাকা সম্বলিত সুবর্ণজয়ন্তী শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন পঞ্চাশ বীর মুক্তিযোদ্ধা। ট্রাকে করে টাউন হল চত্বর থেকে বের হওয়া শোভাযাত্রাটি রংপুর সদর উপজেলা এলাকা পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করবে। পর্যায়ক্রমে জেলার প্রতিটি উপজেলা শহরে প্রদক্ষিণ করবে সুর্বণজয়ন্তী শোভাযাত্রা।

বিকেল ৪টায় টাউন হল চত্বরে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে দিবসের আলোচনা সভা ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওয়াহাব ভূঞা। সম্মানিত অতিথি ছিলেন রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
জেলা প্রশাসক আসিব আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য, মহানগর পুলিশ কমিশনার আবদুল আলীম মাহমুদ, জেলা পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নময় সোনার বাংলা গড়তে সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। দেশ এগিয়ে নিতে অন্যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও বীরঙ্গনাদের ঋণ আমরা কোনোদিনও শোধ করতে পারব না। তাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে সুখী সমৃদ্ধ, উন্নত ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়তে তরুণ সমাজসহ আগামী প্রজন্মকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
এ ছাড়া রংপুর মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা, শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন, কবিতা আবৃতি, গল্পবলাসহ বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও খেলাধুলার আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস। জেলার বিভিন্ন স্থানে সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, স্মৃতিস্তম্ভ ও প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই