জামায়াতের ২ নেতার মৃত্যুদণ্ডে সাতক্ষীরায় আনন্দ মিছিল

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাতক্ষীরা জামায়াতের আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল খালেক মণ্ডলসহ দুই জামায়াত নেতার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা পর আনন্দ মিছিল বের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে পর রায় শুনে সাতক্ষীরা শহরের আব্দুর রাজ্জাক পার্ক থেকে আনন্দ মিছিল বের করে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগ। এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধারাসহ জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
মিছিলের নেতৃত্ব দেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান আশিক ও সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ চৌধুরী, যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষী হাফিজুর রহমান মাছুম, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন, ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও অংশ নেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ জামায়াতের দুই নেতার এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত দুই জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে খুন, ধর্ষণ, অপহরণসহ মানবতাবিরোধী ছয়টি অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় সব্বোর্চ এ দণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় এজলাস কক্ষে আসামির কাঠগড়ায় ছিলেন আব্দুল খালেক মন্ডল। অপর দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি খান রোকনুজ্জামান পলাতক রয়েছেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুজন হলেন সাতক্ষীরা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সদর উপজেলার বৈকারী ইউনিয়নের খলিলনগর গ্রামের বাসিন্দা জামায়াত নেতা আব্দুল খালেক মণ্ডল। অন্যজন শহরের পলাশপোল এলাকার বাসিন্দা জামায়াত নেতা খান রোকনুজ্জামান। তিনি সাতক্ষীরা নবজীবন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা।
মামলার রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান আশিক ও সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেন জানান, ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাতক্ষীরার দুই জামায়াত নেতার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমরা এই রায়ে আনন্দ প্রকাশ করছি। একই সঙ্গে সরকারের কাছে দ্রুত এই রায় কার্যকর করার দাবি করছি।
যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষী হাফিজুর রহমান মাছুম জানান, এই জামায়াত নেতারা যুদ্ধের সময় ও যুদ্ধ-পরবর্তী হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করেছে। ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীরা এসব অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছেন। ফলে আজকের এই রায় প্রত্যাশিত। এই রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরার মানুষ কলঙ্কমুক্ত হবে।
এদিকে জামায়াত নেতার রায়কে ঘিরে সাতক্ষীরা শহরসহ বৈকারী এলাকায় বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১৬ জুন ভোরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী ইউনিয়নের খলিলনগর মহিলা মাদরাসায় নাশকতার উদ্দেশ্যে কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে গোপন বৈঠকের অভিযোগে আব্দুল খালেক মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৭ আগস্ট তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে জব্দ তালিকার সাক্ষীসহ ৬০ জনকে সাক্ষী করা হয়। ওই বছরের ২৫ আগস্ট খালেক মণ্ডলের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলার মধ্যে শহীদ মোস্তফা গাজী হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল।
সাতক্ষীরা সদরের ফিংড়ি ইউনিয়নের শিমুলবাড়িয়া গ্রামের রুস্তম আলীসহ পাঁচজনকে হত্যার অভিযোগে ২০০৯ সালের ২ জুলাই খালেক মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলেন শহীদ রুস্তম আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম গাজী। এ মামলায় তাদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হলো।
আকরামুল ইসলাম/এনএ