উধাও হয়ে যাচ্ছে সৈয়দপুর রেলস্টেশনের লেকলাইনের যন্ত্রাংশ

অপরিকল্পিতভাবে পণ্য খালাসের কারণে নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের লেকলাইনের যন্ত্রাংশ দিন দিন উধাও হয়ে যাচ্ছে। কাঠের স্লিপার ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একাধিক লুপলাইন। বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে পণ্যবোঝাই ওয়াগনগুলো ওইসব লাইনে নেওয়া হচ্ছে। এতে যে কোনো সময়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
সৈয়দপুর রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুলতান মৃধা জানান, স্টেশনের ৫ নম্বর লুপলাইনটি পাথর আনলোড ও ভেকু ব্যবহার করায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও পাথর আনলোডে ভেকু ব্যবহার করায় লুপলাইনের প্রায় দেড় শতাধিক কাঠের স্লিপারের দুই পাশের বর্ধিতাংশ ভেঙে গেছে। এতে লুপ লাইনটিতে ওয়াগন প্রবেশের অনুপযোগী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টারকে অবগত করা হলেও তিনি ঝুঁকি নিয়ে পাথরের ওয়াগন ওই লুপলাইনে প্রবেশ করাচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, ভেকু দিয়ে পাথর আনলোডের কারণে লুপলাইনের পাশে লেক লাইনটির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই লাইনের প্রায় ১০০ ফুটের মধ্যে কোনো টানা রড ও ডিউ ব্লকের অস্তিত্ব নেই। এতে লেকলাইনের দুটি রেলপাত অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। যে কোনো সময়ে চুরি হয়ে যেতে পারে রেলপাত দুটি। এ বিষয়ে স্টেশন মাস্টারকে পরপর ৮ বার চিঠি পাঠিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেলপথ চালু হওয়ায় বাংলাদেশের আমদানিকারকরা এই পথে পাথর আমদানি করছেন। পাথরের ওয়াগনগুলো নীলফামারীর চিলাহাটি হয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে এনে তা আনলোড করা হয়। ইতোমধ্যে সহস্রাধিক ওয়াগন থেকে ভারতীয় পাথর আনলোড করা হয়েছে এই স্টেশনে। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে ও অদক্ষ শ্রমিকের মাধ্যমে দিন-রাত পাথর আনলোড করায় রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাথরগুলো রেলপথের ওপর ফেলে দেওয়ার পর আমদানিকারকরা ভেকু মেশিন দিয়ে তা পণ্যবাহী ট্রাকে লোড করছেন। এতে রেলপথের দুই পাশের মাটিসহ কাঠের স্লিপার ও রেল পাতের যথেষ্ট ক্ষতিসাধন হয়েছে। চুরি হয়ে গেছে অর্ধশতাধিক টানা রড ও ডিউ ব্লক।
সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের পণ্যবাহী ট্রেনের মালামাল আনলোডের শ্রমিকদের সর্দার আফতাব আলম জানান, নির্দিষ্ট সময়ে ওয়াগনের মালামাল খালাস করতে চুক্তিভিত্তিক অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগের মাধ্যমে দিনরাত কাজ করতে হয়। এতে রেলের ট্রাকে পাথর তো পড়বেই। ওয়াগন খালি করা তাদের কাজ। রেলের ক্ষতি তারা করছেন না। রেলের যন্ত্রাংশ চুরির বিষয়টি তারা জানেন না বলে জানান তিনি।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের হাবিলদার মোহাম্মদ এরশাদ জানান, এ স্টেশনে নিরাপত্তা বাহিনীর সাতজন সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন, যা যথেষ্ট নয়। শ্রমিকরা অবৈধভাবে রাতের বেলায় ওয়াগন থেকে মালামাল খালাস করছেন স্টেশন মাস্টারের নির্দেশে। সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার ও গুডস ক্লার্ককে বারবার বলা সত্ত্বেও মালামাল ভর্তি ওয়াগনের হিসেব বা ছাড়পত্র নিরাপত্তা বাহিনীকে দেওয়া হচ্ছে না।
সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. শওকত আলী জানান, লেক লাইনটি প্রায় ২৫ বছর ধরে মেরামত করা হয় না। তাই এ লাইনে কোনো মালামাল খালাস করা হয় না। ফলে রেলের যন্ত্রাংশ বা রেলপাতের ক্ষতিগ্রস্তের বিষয়ে প্রকৌশলীর অভিযোগ সত্য নয়। এছাড়াও চলাচলের অনুপযোগী লুপ লাইনটিকে মাটি ও ইটের টুকরো দিয়ে উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। তাই ওই রেলপথে পণ্যবাহী ট্রেন প্রবেশ করানো নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।
তিনি আরও বলেন, খাদ্যপণ্যের ওয়াগন চুরি হতে পারে- এ কারণে রাতের বেলায় খালাস করা হয় না, কিন্তু পাথরের ওয়াগন খালাসে কোনো বাধা নেই।
শরিফুল ইসলাম/আরএআর