পঞ্চগড়ে উদ্ধার হলো বিরল প্রজাতির সাপ
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় 'রেড কোরাল কুকলি স্নেক' নামের এক বিরল প্রজাতির সাপ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। তবে বন বিভাগের দাবি, বাংলাদেশে প্রথম এই প্রজাতির সাপের দেখা মিলল।
সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) জেলার বোদা উপজেলার ঝলই শালসলশিরী ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ ডাবরবাঙা নতুনহাট এলাকা থেকে শাপটি উদ্ধার করেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। পরে জেলা বন বিভাগকে খবর দিলে জেলা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও উদ্ধারকারী সহিদুল ইসলাম ওই এলাকায় গিয়ে সাপটি উদ্ধার করেন।
পরে বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে সাপটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিআরসির প্রশিক্ষক বোরহান বিশ্বাস রোমনের কাছে হস্তান্তর করলে তিনি সাপটিকে রাজশাহী নিয়ে যান।
এ বিষয়ে সহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরী ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ বাজার-সংলগ্ন ডাবরভাঙা নতুন হাট এলাকায় একটি উঁচু জায়গা এক্সকাভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কাটার সময় একটি সাপ বেরিয়ে আসে এবং সে সময় স্থানীয় ব্যক্তিরা আমাকে খবর দিলে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ৮টি সাপ উদ্ধার করি।
উদ্ধার হওয়া সাপগুলো হলো একটি রেড কোরাল কুকরি, দুটি দাঁড়াশ সাপ, একটি গুইসাপ, দুটি হেলে ও একটি কৃষ্ণ কালাচ। তবে উদ্ধার হওয়া সাপগুলোর মধ্যে রেড কোরাল কুকরি সাপটি এক্সকাভেটরে লেগে আঘাত পেয়েছে। তিনি এটিকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরে রাজশাহী রিসোর্স সেন্টারের প্রশিক্ষক বোরহান বিশ্বাস রোমনের কাছে হস্তান্তর করেন। পরে এটিকে অবমুক্ত করা হয়।
এ ব্যাপারে সাপ গবেষক বোরহান বিশ্বাস রোমন ঢাকা পোস্টকে বলেন, উজ্জ্বল কমলা ও লাল প্রবাল রঙের এ সাপটি অত্যন্ত মোহনীয়। লাল প্রবাল রঙের এ সাপটি মৃদু বিষধারী ও অত্যন্ত নিরীহ। এই সাপ পৃথিবীতে দুর্লভ সাপদের মধ্যে একটি। রেড কোরাল কুকরি হিমালয়ের পাদদেশের দক্ষিণে ৫৫ কিলোমিটার ও পূর্ব-পশ্চিমে ৭০ কিলোমিটার এলাকায় দেখা যায়। পৃথিবীর ২১তম সাপটি মৃত অবস্থায় ও ২২তম সাপটি আহত অবস্থায় পঞ্চগড় থেকে উদ্ধার করা হলো। তবে সাপটি মারাত্মকভাবে আহত ও জখম হওয়ায় বর্তমানে রাজশাহী সাপ উদ্ধার ও সংরক্ষণ কেন্দ্রে চিকিসাধীন রয়েছে।
তিনি আরও জানান, এ বিরোল প্রজাতির সাপটি প্রথম ১৯৩৬ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশে এবং প্রায় ৮২ বছর পর ২০১৯ সালে আবারও উত্তর প্রদেশে দেখা যায় এবং সর্বশেষ এবার পঞ্চগড়ে দেখা মিলল। সাপটি নিশাচর প্রাণী। বেশির ভাগ সময় এরা মাটির নিচেই অবস্থান করে। সম্ভবত সাপটি মাটির নিচে কেঁচো ও লাভা পিঁপড়ার ডিম ও উইপোকার ডিম খেয়ে জীবনধারণ করে। নরম মাটি পেলে এরা মাটির ভেতরে চলে যায়। মাটির ভেতরে থাকার জন্য রোস ট্রালস স্কেল ব্যবহার করে এরা। স্কেল হলো সাপের মুখে সম্মুখভাগে অবস্থিত অঙ্গবিশেষ, যার সাহায্যে মাটি খনন করে।
রেড কোরাল কুকরি পূর্ণ বিষধর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সাপটি নিয়ে গবেষণা চলছে বলে জানান তিনি। সব বণ্য প্রাণী আমাদের অমূল্য সম্পদ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান বোরহান বিশ্বাস। ভুটান, নেপাল ও ভারতের নিকটে হওয়ায় পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় সাপটি থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।
রনি মিয়াজী/এনএ