ভোটের তিনদিন আগে কালকিনি পৌরসভা নির্বাচন স্থগিত

নানা নাটকীয়তায় পর আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভা নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার (১১ ফ্রেব্রুয়ারি) রাতে মাদারীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও কালকিনি পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়) মোহাম্মদ মোরশেদ আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত মাদারীপুর জেলার কালকিনি পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।
চিঠিটি বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় মাদারীপুর জেলায় আসার পর কালকিনি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এসে পৌঁছায়।
জানা যায়, গত শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন কালকিনির স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মশিউর রহমান সবুজ। সেখান থেকে কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিরউদ্দিন পুলিশের গাড়িতে করে তাকে নিয়ে যান। এরপর পরই নিখোঁজ হন সবুজ। এরই প্রতিবাদে বিক্ষোভ নিয়ে কালকিনি থানা ঘেরাও করেন সবুজের সমর্থকরা। টায়ার জ্বালিয়ে স্লোগান দেন বিক্ষুব্ধরা। এ সময় কালকিনি-ভুরঘাটা-মাদারীপুর আঞ্চলিক সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৮৬ জন আহত হন। আড়াই ঘণ্টা চলা সংঘর্ষে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৪টার দিকে নিজ বাড়িতে ফিরেন মশিউর রহমান সবুজ। এদিকে দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ৫৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। সেই মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও দুই থেকে তিনশ জন।
এছাড়াও কালকিনি থানার ওসির মোবাইল নম্বর ক্লোন করে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রপ্রার্থীর ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে ফোন করে নির্বাচনে সুবিধা দেয়ার কথা বলার অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে থানায় জিডি করা হয় গত বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি)।
কালকিনি পৌরসভার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মশিউর রহমান সবুজ জানান, নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী আমি মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলাম। নির্বাচন স্থগিত করার কোনো কারণ আমি দেখছি না। কোনো অপশক্তি এই নির্বাচন স্থগিত করেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে কথা বলতে কালকিনি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এম এ হানিফের ব্যক্তিগত মোবাইলে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কালকিনি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা শেখ বদরউদ্দিন বলেন, রাতে আমাদের জানানো হয়েছে মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভা নির্বাচন পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।
কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য তাহামিনা সিদ্দিকি বলেন, এখন প্রায় সকল প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণা শেষ পর্যায়ে। শেষ মুহূর্তে এসে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় প্রার্থীদের মানসিক ও আর্থিক সমস্যা হতে পারে। তবে কিছুদিন আগে কালকিনিতে যে ঘটনা ঘটেছে তা আমরা আশা করিনি। কালকিনিতে এ রকম ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি।
মাদারীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও কালকিনি পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। বৃহস্পবিার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন থেকে এই নির্বাচন স্থগিত রাখার আদেশ এসেছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই নির্বাচন স্থগিত থাকবে।
নাজমুল মোড়ল/আরএআর